আলাস্কার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি শুধু মুনাফাই করেনি, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায়ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ‘আইসি স্ট্রেইট পয়েন্ট’ নামের এই স্থানটি এখন সারা বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
আলাস্কার জুনো থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিকাগফ দ্বীপের হুনাহ্ অঞ্চলের আদিবাসী টিংলিট সম্প্রদায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। একসময় যখন তাদের প্রধান আয়ের উৎস, কাঠ ও মাছ ধরা, প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন তারা পর্যটনের সম্ভাবনা খুঁজে বের করে।
স্থানীয়রা যখন কাজের খোঁজে অন্য কোথাও যেতে শুরু করে, তখন তাদের সংস্কৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন হুনাহ্ টোটেম কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাসেল ডিক। তিনি বলেন, “পর্যটনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারি এবং আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানাতে পারি।”
এর ফলস্বরূপ, হুনাহ্ অঞ্চলের টিংলিট সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ক্রুজ ডেস্টিনেশন তৈরি করে, যা ‘আইসি স্ট্রেইট পয়েন্ট’ নামে পরিচিত। এটি আলাস্কার ‘ইনসাইড প্যাসেজ’-এর প্রথম ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ক্রুজ গন্তব্য, যা বর্তমানে ২১ বছর ধরে সফলভাবে চলছে।
এখানে একটি পুরনো স্যামন কারখানাকে আধুনিকীকরণ করে জাদুঘর ও স্থানীয় পণ্যের দোকান তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে ভালুক দেখা, তিমি দেখা এবং সাংস্কৃতিক ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।
একটি কেবল কারের মাধ্যমে পর্যটকদের পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, যা বাসের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধে সহায়ক হয়েছে।
‘আইসি স্ট্রেইট পয়েন্ট’ তৈরিতে পরিবেশ, স্থানীয় মানুষের অধিকার ও ব্যবসার লাভ—এই তিনটির প্রতিই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসেল ডিক বলেন, “টেকসই উন্নয়ন মানে কেবল কার্বন নিঃসরণ কমানো নয়, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।”
পর্যটন কেন্দ্রটি চালু হওয়ার ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ভাষার পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। এখানকার শিশুরা এখন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে নাচ করে।
এমনকি একসময় যারা কাজের খোঁজে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তারাও নতুন ব্যবসা শুরু করতে এবং পরিবার গড়তে ফিরে এসেছে। রাসেল ডিক আরও জানান, “আমরা আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে চাই। অতিরিক্ত ভিড় হলে, তা আমাদের সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
‘আইসি স্ট্রেইট পয়েন্ট’-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, হুনাহ্ টোটেম কর্পোরেশন আলাস্কা থেকে শুরু করে ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসী-নেতৃত্বাধীন টেকসই উন্নয়নের মডেল তৈরি করছে। তারা প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে অবস্থিত কালাওক হীনিয়া নামক আদিবাসী কর্পোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে।
গত মে মাসে ‘ইনসাইড প্যাসেজ’-এর দক্ষিণে কালাওক বন্দরটি খোলা হয়েছে, যেখানে পুরনো একটি শিল্প এলাকার পরিবর্তে ইকো-ট্যুরিজমের বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
আলাস্কার এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রমাণ করে, স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনা সম্ভব। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্যেও এই ধরনের উদ্যোগ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার