শিরোনাম: সাফল্যের সংজ্ঞা ও সমাজের নীরবতা: আন্তরিকতা কি এখন অপরাধ?
বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে, সাফল্যের ধারণা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। একদিকে, আমরা দেখি কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যা তাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়।
অন্যদিকে, সমাজের একটি অংশ যেন এইসব আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সাফল্যের পথে দৃঢ়ভাবে হেঁটে চলা মানুষদের সন্দেহের চোখে দেখে। তাদের মনে হয়, অতিরিক্ত আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা যেন একটা অপরাধ।
বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে, আসুন পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে আসা কয়েকটি উদাহরণের দিকে তাকাই। সম্প্রতি, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কিছু অভিনেতার প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনলাইনে বেশ আলোচনা হয়েছে।
জেরেমি স্ট্রং নামক একজন অভিনেতা, যিনি তার অভিনয় জীবনের সাফল্যের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং নিজের শৈশবের একটি ছবি শেয়ার করেন। তিনি জানান, কিভাবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের বাইরে ঠান্ডা বেঞ্চে বসে থেকে তিনি এই স্বপ্নকে লালন করেছেন।
এই ঘটনার বিপরীতে, তাঁরই সহ-অভিনেতা কিয়েরান কুলকিন প্যারিসের একটি বারান্দায় শ্যাম্পেন হাতে তার সাফল্যের উদযাপন করেন এবং একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন, “লেটস ফাকিং গোওওওও।
এই দুটি ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি যেন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। অনেকে কুলকিনের নির্ভার, স্বতঃস্ফূর্ত আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করেন, যেখানে স্ট্রংয়ের গভীর আবেগ ও আন্তরিকতাকে অতিরিক্ত মনে করা হয়।
এমনকি অভিনেতা টিমোথি শালামেট-এর একটি বক্তব্যও সমালোচনার শিকার হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “আমি শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধানে আছি।
অনেকেই যেন মনে করেন, সাফল্যের পথে এতটা “আন্তরিক” হওয়াটা দৃষ্টিকটু।
কিন্তু কেন এমনটা হয়? কেন একজন মানুষের সাফল্যের জন্য এতখানি চেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন প্রকাশ করাটা যেন সমাজের চোখে দুর্বলতা?
বর্তমান সমাজে যেন সবকিছু সহজে পাওয়া, কোনো প্রকার চেষ্টা ছাড়াই সফল হওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। “সাইলেন্ট লাক্সারি” বা “স্টিल्থ ওয়েলথ”-এর মতো ধারণাগুলোও এই প্রবণতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
মানুষ এখন দেখাতে চায় যে তারা সফল, কিন্তু সেই সাফল্যের পেছনে তাদের কোনো চেষ্টা নেই। তাদের পোশাক, লাইফস্টাইল সবকিছুই যেন এই “চেষ্টা না করার” বার্তা দেয়।
কেউ যদি তার আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন অথবা চেষ্টাগুলো প্রকাশ করে, তবে তাকে যেন সমাজের চোখে দুর্বল হিসেবে দেখা হয়।
তবে, এই প্রবণতা কি সত্যিই সঠিক? যারা তাদের কাজকে ভালোবাসেন, তাদের স্বপ্নকে সত্যি করতে চান, তাদের কি সবসময় সমালোচনার শিকার হতে হবে?
অবশ্যই, সাফল্যের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সমাজের এই নীরবতা, আন্তরিকতার প্রতি এই বিরূপ মনোভাব সম্ভবত আমাদের আরও গভীর কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করে।
আমরা কি সত্যিই আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রকাশ করতে ভয় পাই? আমরা কি আমাদের দুর্বলতাগুলো ঢাকতে চাই?
আসলে, আন্তরিকতা, কঠোর পরিশ্রম এবং স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা—এগুলো মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সমাজের উচিত এই বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করা, দুর্বলতা হিসেবে দেখা নয়।
কারণ, যারা তাদের স্বপ্নকে সত্যি করতে চায়, তারাই সমাজের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: পশ্চিমা সংস্কৃতি বিষয়ক একটি বিশ্লেষণ অবলম্বনে।