যুক্তরাজ্যে বিয়ারের দাম বাড়তে থাকায় সামাজিক জীবন নিয়ে শঙ্কা।
আগামী মাস থেকে যুক্তরাজ্যের (UK) বাজারে এক পাইন্ট বিয়ারের গড় দাম ৫ পাউন্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার খবরে অনেক মদ্যপায়ীর মনে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ বিয়ার অ্যান্ড পাব অ্যাসোসিয়েশন (BBPA) -এর হয়ে ফ্রন্টিয়ার ইকোনমিকস নামক একটি গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, এপ্রিল মাস থেকে এক পাইন্ট বিয়ারের গড় দাম ৫.০১ পাউন্ডে পৌঁছতে পারে, যা বর্তমান দামের চেয়ে ২১ পেনি বেশি।
এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং নিয়োগকর্তাদের জাতীয় বীমা ভাতার (National Insurance contribution) ওপর বর্ধিত খরচ। এছাড়াও, আতিথেয়তা ব্যবসার (Hospitality Business) ওপর থেকে ব্যবসার হারে ছাড়ও হ্রাস করা হয়েছে, যা আগে ৭০ শতাংশ ছিল, তা এখন কমে ৪০ শতাংশ হয়েছে।
পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের (West Yorkshire) একটি পাব-এর শহর হিসেবে পরিচিত ওটলি-তে (Otley) বিয়ারের দাম বাড়ার খবরে অনেকেই অসন্তুষ্ট। সেখানকার স্থানীয়রা মনে করছেন, এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাবগুলোতে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে এবং গ্রীষ্মকালে সুন্দর আবহাওয়াতেও তারা হয়তো বাড়ির বাগানে সময় কাটাতে বাধ্য হবেন।
ওটলির স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই শহরে সম্ভবত যুক্তরাজ্যের অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে বেশি পাব রয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫,০০০ মানুষের জন্য ২৪টি পাব রয়েছে। এখানকার পাবগুলো বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে কিছু পাব মালিকরা বলছেন, গ্রাহকরা অনেক সময় তাঁদের ব্যবসার উপর আসা আর্থিক চাপ সম্পর্কে অবগত নন। পাব ও বারগুলো ইতিমধ্যেই খরচ কমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু বিয়ারের দাম বাড়ানো ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই।
একটি স্থানীয় পাবের ম্যানেজার লিসা চপেন বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় খরচ কর্মীদের বেতন। আমরা যখন পারি, তখন কর্মীদের কাজের সময় কমানোর চেষ্টা করি, কিন্তু বেশি ভিড় থাকলে তো আর তাদের আগেভাগে বাড়ি পাঠানো যায় না। আমরা সবাই চাই ভালো বেতন।”
পাব মালিকরা আরও বলছেন, ব্যবসার হারের কারণেও তাঁদের ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন বাড়িতে বসে মদ্যপান করা তাঁদের জন্য সাশ্রয়ী। একটি বড় গ্লাসের দামের সমান মূল্যে তারা একটি বোতল ওয়াইন কিনতে পারেন। কিন্তু মানুষ পাবগুলোতে আসে কারণ এখানে সামাজিকতা রয়েছে।
অন্যদিকে, অনেক গ্রাহক মনে করেন, সরকার যেন মানুষকে ঘরবন্দী করতে চাইছে। তাঁদের মতে, পাবগুলো বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ একাকীত্বে ভুগবে।
যুক্তরাজ্যের এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের কথা মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানে, আমাদের দেশেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে, যা সামাজিক জীবন এবং বিনোদনের সুযোগগুলোকে সীমিত করে দিচ্ছে। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান