বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের কাছে ক্লডিয়া রডেন একটি সুপরিচিত নাম। তিনি শুধু একজন রন্ধনশিল্পীই নন, বরং খাদ্য বিষয়ক লেখক, ইতিহাসবিদ এবং সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্য এবং ইহুদি খাবারের সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান ও অনুসন্ধিৎসা তাঁকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। সম্প্রতি, তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনার সুযোগ হয়েছিল, যেখানে উঠে এসেছে তাঁর খাদ্য বিষয়ক ভাবনা, উদ্বাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা এবং খাদ্য সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা।
ক্লডিয়া রডেনের জন্ম মিশরের কায়রো শহরে। সেই সময়ের কায়রোর ইহুদি সমাজে তিনি বেড়ে ওঠেন।
ফরাসি, ইতালীয়, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সাবলীল ছিলেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে তিনি মিশরের ব্যাকস্ট্রোক সাঁতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তাঁর শৈশবের দিনগুলো ছিল বেশ অন্যরকম।
রান্নার কোনো ধরাবাঁধা রেসিপি বা বই ছিল না, সবকিছু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন, খাদ্য সংস্কৃতির ইতিহাস সংরক্ষণ করা কতটা জরুরি।
১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকটের কারণে রডেনের পরিবার মিশর ছাড়তে বাধ্য হয় এবং লন্ডনে পাড়ি জমায়। উদ্বাস্তু হিসেবে নতুন দেশে এসে তিনি তাঁর শিকড়ের টানে অনুভব করেন একটি শূন্যতা।
এই সময়টাতেই তিনি রান্নাকে আশ্রয় করে পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো নতুন করে খুঁজে পেতে শুরু করেন। লন্ডনে আসার পর তিনি এলিজাবেথ ডেভিডের লেখা *আ বুক অফ মেডিটারিয়ান ফুড* বইটি হাতে পান, যেখানে তিনি “মোলোখিয়া” নামক একটি মিশরীয় সুপের রেসিপি খুঁজে পান।
রেসিপি লেখার গুরুত্ব তিনি অনুভব করেন এবং খাদ্য বিষয়ক গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।
তাঁর বিখ্যাত বই *আ বুক অফ মিডল ইস্টার্ন ফুড* (১৯৬৮) প্রকাশের মাধ্যমে রন্ধন জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। এই বইটিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের রেসিপি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক চমৎকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বইটি প্রকাশের পর মিশরীয় শেফদের মধ্যে তাঁদের নিজস্ব খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। রডেন তাঁর বইয়ের মাধ্যমে খাদ্যকে শুধু একটি উপভোগের বিষয় হিসেবেই দেখেননি, বরং একে একটি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তাঁর মতে, খাদ্য সংস্কৃতির বিনিময় এবং সংঘাতের মধ্যে জন্ম নেয় সেরা ঐতিহ্যবাহী খাবার।
পরবর্তীতে, তিনি *দ্য বুক অফ জিউইশ ফুড* (১৯৯৭) লেখার জন্য ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভ্রমণ করেন।
এই সময় তিনি খাবার নিয়ে গবেষণা করেন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের খাদ্যরীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।
টেলিভিশনের পর্দায় কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না তাঁর জন্য। ক্যামেরার সামনে নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হত।
বর্তমানে ক্লডিয়া রডেন তাঁর ২২তম বইয়ের কাজ করছেন, যেখানে তিনি আবারও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রান্না এবং সাধারণ মানুষের খাবারের ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করবেন।
রডেন মনে করেন, এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের খাবারগুলো এখনো সেভাবে স্বীকৃতি পায়নি, যা পাওয়া উচিত। খাদ্য বিষয়ক এই অনুসন্ধানী লেখকের কাজ খাদ্যরসিকদের জন্য এক অমূল্য উপহার।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান