পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য: সংকট থেকে উত্তরণের দিশা?
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ এখন বিশ্বজুড়ে, এবং এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে একাকীত্ব, সম্পর্ক বিষয়ক সমস্যা, এবং মানসিক অবসাদ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, কিছু বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষক এগিয়ে এসেছেন, যারা পুরুষদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি, পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষদের জন্য জীবন-পরামর্শক বা ‘লাইফ কোচ’-এর ধারণা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এই পেশাজীবীরা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক এবং কর্মজীবনে উন্নতি করতে সহায়তা করেন।
তবে, তাঁদের কাজ করার ধরন এবং দর্শনে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, বেন বিডওয়েল এবং ব্রায়ান রিভস-এর মতো প্রশিক্ষকরা পুরুষত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেন।
তাঁরা পুরুষদের আবেগপূর্ণ জীবন গঠনে উৎসাহিত করেন।
অন্যদিকে, সমাজের কিছু অংশে পুরুষদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যায়। এটিকে ‘ম্যানোস্ফিয়ার’ নামে একটি অনলাইন জগতে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে নারীবাদ বিরোধী এবং পুরুষতান্ত্রিক ধারণাগুলো প্রভাবশালী।
এই ম্যানোস্ফিয়ারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পুরুষদের দুর্বলতা এবং অভিযোগকে পুঁজি করে তাঁদের আকৃষ্ট করেন।
তবে, ব্রায়ান রিভস-এর মতো প্রশিক্ষকরা এই ধরনের ক্ষতিকর ধারণার বিরোধিতা করেন। তিনি পুরুষদের জন্য সুস্থ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তাঁদের ব্যক্তিগত উন্নয়নে সাহায্য করেন।
রিভস মনে করেন, সমাজে পুরুষদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংকট মোকাবিলায় শুধু পশ্চিমা বিশ্ব নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও পুরুষদের সামাজিক এবং মানসিক চাপ রয়েছে।
পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের অন্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা ও সমর্থন পাওয়া প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবাগুলো সহজলভ্য করা এবং পুরুষদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশেও এমন কিছু সংগঠন এবং ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদান এবং তাঁদের সামাজিক সমর্থন জোগানোর চেষ্টা করছেন।
এই সমস্যা সমাধানে, পুরুষদের নিজেদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা, প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া, এবং সমাজের নেতিবাচক ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংকট মোকাবিলায় একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, পরিবার, সমাজ এবং প্রত্যেক ব্যক্তির সচেতনতা ও সহযোগিতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian