গাজায় ইসরায়েলি হামলায় পরিবার হারানো ফিলিস্তিনি শিক্ষকের করুন কাহিনী।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি পরিবারের মর্মান্তিক গল্প। আলা আবু জেইদ নামের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষককে আটকের পর যখন মুক্তি মেলে, তিনি ফিরে আসেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজের বাড়িতে। কিন্তু সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল এক চরম ট্র্যাজেডি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরওয়া)-এর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী আলা আবু জেইদ। গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি সেনারা স্কুলটিকে আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে সেখানে অভিযান চালায়। এসময় তাকে আটক করা হয়। এরপর দীর্ঘ ১৫ মাস পর, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান তিনি।
মুক্তির পর যখন তিনি খান ইউনিসে তার ভাইয়ের কাছে ফিরলেন, তখনো তিনি জানতেন না তার জীবনে কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আলার ভাই আলী জানান, আলা যখন ফিরছিলেন, তখন তারা সবাই খুব খুশি ছিলেন, কিন্তু সেই খুশির মাঝে মিশে ছিল গভীর শোক।
কারণ, আলাকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর খবর দেওয়ার মতো সাহস তাদের ছিল না। গত বছর, ইসরায়েলি বিমান হামলায় আলার স্ত্রী হালা, তাদের দুই মেয়ে নওরা ও ওয়ালা এবং দুই ছেলে রিয়াদ ও মোহাম্মাদ নিহত হয়।
আলার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন শিক্ষক, প্রকৌশলী এবং শিক্ষার্থী। ভয়াবহ ওই হামলায় তাদের বাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনার দিন সকালে আলীর ছেলেরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনদের মরদেহ খুঁজে পান।
মুসলিম রীতি অনুযায়ী, সেদিনই তাদের দাফন করা হয়। গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বোমা হামলায় ইতোমধ্যে ১৪০০ পরিবারের সবাই নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এই হিসাবকে সঠিক বলে জানিয়েছে। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময়ের ফলে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা করছে স্বজন হারানোর বেদনা।
আলার ভাই আলী বলেন, ‘আলা মুক্তি পাওয়ার পর পরই তাদের কবরস্থানে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একদম চুপ, কোনো কান্না ছিল না। আমার মনে হয়, তিনি যেনো এক গভীর শোকের মধ্যে ছিলেন।’
আলাকে মুক্তি দেওয়ার পর জানা যায়, আটকের সময় তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অস্ত্রোপচার করতে হবে। নেগেভ মরুভূমির কারাগারে বন্দীদের অমানবিক জীবন যাপন করতে হয়েছে।
সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসার অভাব ছিল, যার ফলে অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আলার ভাই আরও জানান, কারাগারে থাকাকালীন আলা এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন যে, মুক্তির পর তাকে কঙ্কালের মতো দেখাচ্ছিল।
কারাগারে থাকাকালীন তিনি সবসময় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার কথা বলতেন। আলা এখন তার ভাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে থাকছেন এবং সুস্থ হয়ে আবার শিক্ষকতা শুরু করতে চান। তবে, তিনি আগের মতো নেই।
তিনি এখন খুব শান্ত এবং মানুষের সঙ্গে সহজে কথা বলতে পারেন না। সবসময় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন এবং কোরআন পাঠ করেন। তার ঘরটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রিয়জনদের কোনো ছবিও তার কাছে নেই।
আলার ভাই বলেন, ‘সে (আলা) কল্পনা করেছিল, আবার তার সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরবে এবং সুন্দর জীবনযাপন করবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সে ফিরে এসে দেখল এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি।’ তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান