যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হওয়া তুরস্কের এক শিক্ষার্থীর ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, রুমেসা ওজতুর্ক নামের ৩০ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের টাফটস ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছিলেন।
গত মঙ্গলবার সকালে, সোমারভিলে নিজের বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগের কর্মকর্তারা। এরপর দ্রুত তাঁকে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সাধারণত, কোনো অভিযুক্তের বিষয়ে আদালতের শুনানির আগেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা নিয়ে অনেক সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, রুমেসা ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করতেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, এই সমর্থনের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেনি।
রুমেসার আইনজীবীর দাবি, আটকের সময় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে রমজানের ইফতারের জন্য বের হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে রুমেসাসহ অন্তত ৩০০ জনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাঁদের পড়াশোনা ও ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভিসা দিয়েছিলাম, সামাজিক কর্মী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য নয়।”
তবে, রুমেসার বন্ধু এবং সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে তাঁর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
তাঁদের মতে, রুমেসা কেবল একটি ছাত্র পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন, যেখানে তিনি টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে, আটকের পর রুমেসাকে দ্রুত অন্য রাজ্যে সরিয়ে নেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুখ খোলা অথবা প্রতিবাদ জানানোয় এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের একটি কৌশল।
ইতিমধ্যেই রুমেসার মুক্তির দাবিতে সোমারভিলে কয়েকশ মানুষের সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা এবং অভিবাসীদের ওপর আইসিই-এর ধরপাকড়ের নিন্দা জানান।
প্রতিবাদকারীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
রুমেসার আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁর মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রুমেসাকে ম্যাসাচুসেটস থেকে অন্য কোথাও না সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আটক হওয়া রুমেসা ওজতুর্কের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস