মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালের একটি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল অঙ্কের সেটেলমেন্টের খরচ বহন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ওহাইও-পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের সীমান্ত এলাকায় ঘটা এই দুর্ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষ নরফোক সাউদার্ন-কে এখন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
এই ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের দায় কার, তা নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, এই মামলায় নরফোক সাউদার্ন চাইছে, রেলের বগি সরবরাহকারী জিএটিএক্স (GATX) এবং রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি অক্সিভিনাইলস-কে (OxyVinyls) এই ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগাভাগি করতে বাধ্য করা হোক। তাদের দাবি, এই দুই কোম্পানির গাফিলতির কারণে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তবে, উভয় কোম্পানিই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, পূর্ব প্যালেস্টাইন, ওহাইও-তে একটি মালবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ট্রেনটিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে কিছু নির্গত হয়ে পড়লে তা থেকে আগুন ধরে যায়।
এরপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভিনাইল ক্লোরাইডসহ বেশ কয়েকটি রাসায়নিক বহনকারী ট্যাংকার পোড়ানো হয়, যা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ তৈরি হয়।
আদালতে নরফোক সাউদার্নের আইনজীবীরা বলছেন, জিএটিএক্স-এর ত্রুটিপূর্ণ বগির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের মতে, বগির একটি যন্ত্রাংশ অতিরিক্ত গরম হয়ে বিকল হয়ে যায়, যার ফলে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
অন্যদিকে, অক্সিভিনাইলস-এর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার আগে ভিনাইল ক্লোরাইড সম্পর্কে তারা ভুল তথ্য সরবরাহ করেছিল।
অন্যদিকে, জিএটিএক্স এবং অক্সিভিনাইলস উভয়েই দুর্ঘটনার জন্য নরফোক সাউদার্ন-কেই দায়ী করছে। তাদের যুক্তি, দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল নরফোক সাউদার্নের।
জিএটিএক্স জানিয়েছে, তাদের বগিগুলো সব নিয়ম মেনেই তৈরি করা হয়েছিল। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (National Transportation Safety Board) দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জিএটিএক্স-এর বগির একটি যন্ত্রাংশের অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়াকে চিহ্নিত করেছে।
এই মামলার রায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরাসরি প্রভাবিত না করলেও, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পক্ষকে চিহ্নিত করতে এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে শিল্প-দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানেও এ ধরনের ঘটনার দায়বদ্ধতা এবং সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে। মামলাটি ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস