শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুককে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে রূপান্তরকারী যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে রাজ্যগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রে পিস্তলকে স্বয়ংক্রিয় (machine gun) অস্ত্রে রূপান্তর করার যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে বিভিন্ন রাজ্যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি আলাবামাতেও এই ধরনের যন্ত্রের মালিকানা নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়েছে, যেখানে এই ধরনের যন্ত্র তৈরি, বিক্রি বা possession (নিজের কাছে রাখা) করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নিউ মেক্সিকোতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সেখানকার আইনে এই ধরনের যন্ত্রের মালিক হলে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
আসলে, এইসব যন্ত্রগুলি “গ্লক সুইচ” নামেই বেশি পরিচিত। এই যন্ত্রগুলি একটি সাধারণ পিস্তলের সাথে যুক্ত করে সেটিকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মতো গুলি ছুঁড়তে সক্ষম করে তোলে।
সাধারণত, একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র একটানা ট্রিগার চেপে ধরলে অনেকগুলো গুলি ছুঁড়তে পারে। এই ধরনের পরিবর্তন খুবই দ্রুত এবং সহজে করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুযায়ী, মেশিনগান তৈরি বা মালিকানা রাখা দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এই “গ্লক সুইচ”-এর মতো যন্ত্রাংশ তৈরি এবং ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে।
এর প্রধান কারণ হলো, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সহজলভ্যতা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বল্প খরচে সহজেই এই যন্ত্রাংশ তৈরি করা যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ৮১৪টি মেশিনগান রূপান্তর করার যন্ত্রাংশ উদ্ধার করেছিল। কিন্তু ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৪৫৪ তে।
শুধু তাই নয়, জো বাইডেন প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩৪ মাসের মধ্যে (২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১২,৩৬০টি সন্দেহজনক মেশিনগান রূপান্তর করার যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ফ্লোরিডা, ইলিনয়, টেক্সাস, মন্টানা এবং নর্থ ডাকোটা—এই পাঁচটি রাজ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সমর্থনকারীরা মনে করেন, রাজ্য পর্যায়ে এই ধরনের আইনগুলো ফেডারেল আইনের চেয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে এবং গ্লক সুইচের বিস্তার রোধে সহায়ক হবে। তারা এই যন্ত্রাংশ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানাচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া, মেরিল্যান্ড এবং নিউইয়র্কের মতো রাজ্যগুলোতে এমন আইন প্রণয়নের চেষ্টা চলছে, যেখানে এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, বন্দুক অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলো এই ধরনের আইনের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, ফেডারেল আইন থাকতেই পারে, তবে রাজ্য পর্যায়ে এই ধরনের আইনগুলো অপ্রয়োজনীয়।
তাদের যুক্তি হলো, যারা বন্দুক ব্যবহার করে অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফেডারেল আইনই যথেষ্ট। তারা মনে করেন, এই ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার অনেক সময় আত্মরক্ষার কাজেও লাগতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা আমাদের দেশে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ অস্ত্র পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অস্ত্রের অবৈধ পরিবর্তন এবং এর ফলে সমাজে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হওয়া একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
তথ্য সূত্র: Associated Press