ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক ঘোষণার প্রস্তুতি, বাংলাদেশের জন্য এর সম্ভাব্য প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার আলোচনায়, এবার তার প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতির কারণে। এই নীতিকে তিনি ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, এবং এর প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং মাদকদ্রব্য প্রবেশ কমানো, বাণিজ্য ক্ষেত্রে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে একটি সমতা আনা, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করা এবং দেশের উৎপাদনখাতকে শক্তিশালী করা। তিনি মনে করেন, কিছু দেশের উচ্চ শুল্কের কারণে এবং বাণিজ্য ঘাটতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই কারণে তিনি পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কথা বলছেন।
যদি এই শুল্ক নীতি কার্যকর হয়, তবে এর ফলস্বরূপ বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে চীন, কানাডা, মেক্সিকো, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তবে তারাও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ঘোষণা করেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে। এছাড়া, বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং অনেক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই শুল্ক নীতির প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসলে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়বেই। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি পেলে তা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে পারে। আবার, আমদানি পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। নতুন শুল্ক নীতির ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাণিজ্য চুক্তি এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
সুতরাং, ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই নীতির ফলে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন