ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমার: মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, মানবিক বিপর্যয় গভীর।
মিয়ানমারে আঘাত হানা শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং অঞ্চলে এখনো মৃত্যুর গন্ধ। গত সপ্তাহে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ইতোমধ্যে ৩,১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে, কারণ দেশটির সামরিক জান্তা ত্রাণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। একইসঙ্গে, গৃহযুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
ভূমিকম্পের পর সেখানকার রাস্তাঘাট এবং সেতুগুলো ভেঙে যাওয়ায় দুর্গত এলাকাগুলোতে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যারা সামান্য আশ্রয় পেয়েছেন, তারাও খোলা আকাশের নিচে, মশা এবং তীব্র গরমের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সমাজকর্মী কো জিয়ার বলেন, “মৃতদেহের গন্ধে পুরো শহর ভারী হয়ে উঠেছে।
ভূমিকম্পের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাগাইং শহর। সেখানকার প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী মন্ডালেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পটি প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও চীনেও অনুভূত হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই সাগাইং অঞ্চল সামরিক বাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থী ‘জনগণের প্রতিরোধ বাহিনী’র মধ্যে এক বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সামরিক জান্তা এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহীদের সমর্থনকারীদের গ্রামগুলোতে প্রায়ই সেনারা হামলা চালাচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং বাসিন্দাদের হত্যা করছে। ভূমিকম্পের পরেও এই ধরনের হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পেছনে সামরিক জান্তার অসহযোগিতা একটি প্রধান কারণ। জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি’র মতে, “কেন মিন অং হ্লাইং উদ্ধার ও ত্রাণকার্যের জন্য সামরিক সম্পদ ব্যবহার করছেন না?” সাহায্যকর্মীদের অভিযোগ, সামরিক সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য পাঠাতে বাধা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য : চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করছেন। চীন সরকার এরইমধ্যে ১ কোটি ইউয়ানের বেশি ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬ কোটি টাকার সমান।
যুক্তরাষ্ট্রও সীমিত আকারে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। তবে, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা মনে করছে, এই সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
অন্যদিকে, সামরিক জান্তা বিদেশি সাহায্য পেতে বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য অনুমতি নিতে হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ। এছাড়া, সেনাবাহিনীর ভয়ে অনেকে ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।
মানবিক সংকট : ভূমিকম্পের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খাদ্য, জল, আশ্রয় এবং চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ সরবরাহ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের একার পক্ষে এই বিশাল বিপর্যয় মোকাবেলা করা কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বেশি সহায়তা করা উচিত। বিশেষ করে, খাদ্য, জল, আশ্রয় এবং স্বাস্থ্যবিধির সামগ্রী সরবরাহ করা জরুরি। এছাড়া, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জন্য দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা ও আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।