মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান পার্টির (GOP) নেতাদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়নে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। বাজেট কাটছাঁট এবং কর নীতি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন দেখা দেওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।
হাউসের স্পিকার, রিপাবলিকান মাইক জনসন, ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কিভাবে সফল হবেন, তা এখন দেখার বিষয়।
স্পিকার জনসন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের জন্য ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। একই সঙ্গে ট্রাম্পের কর ছাড়ের মেয়াদও বাড়াতে চান তিনি।
কিন্তু দলের মধ্যেকার কট্টরপন্থী এবং মডারেট উভয় ধরনের রিপাবলিকানদের মধ্যে এই বিষয়ে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জনসনের পক্ষে কাজটি বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা সিএনএনকে বলেছেন, “যখন আপনারা কাগজ-কলম নিয়ে বসবেন এবং দেখবেন আমরা আসলে কী করছি, এবং এর সঙ্গে যদি সিনেটের সমর্থন নাও পাওয়া যায়, তবে এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি।” তিনি আরও বলেন, “যদি আপনারা মনে করেন সিনেটের জন থুন ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি কাটছাঁট করতে রাজি হবেন, তবে আপনারা ভুল করছেন।
নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি নিকোল ম্যালিওটাকিসও এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি না ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার কাটছাঁট করা সম্ভব হবে। সম্ভবত এই সংখ্যাটা আরও কম হবে।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান দলের কট্টরপন্থীরা চূড়ান্ত বিলে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কম কাটছাঁট করতে রাজি নন। জর্জিয়ার প্রতিনিধি রিচ ম্যাককর্মিক, যিনি বাজেট ব্লুপ্রিন্টের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত কাটছাঁট যদি কম হয়, তবে বিলটি পাস হবে না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, শুধু আমি নই, এমন আরও ৩০ জন সদস্য এর বিপক্ষে ভোট দেবেন।
ইতিমধ্যে, প্রতিনিধি পরিষদের বাজেট পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে। এখন রিপাবলিকানরা একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যা ক্যাপিটল হিলে ‘রিকনসিলিয়েশন’ নামে পরিচিত, তার মাধ্যমে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন।
এই প্রক্রিয়ায় সিনেটে কোনো filibuster-এর (দীর্ঘ আলোচনা বা বাধার সম্মুখীন হওয়া) সম্ভাবনা নেই, যার ফলে রিপাবলিকানরা সরাসরি তাদের পরিকল্পনা পাস করতে পারবে।
তবে বিলের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে এখনো অনেক আলোচনা বাকি। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন কর কাঠামোর পরিবর্তন, অভিবাসন আইন আরও কঠোর করা, জ্বালানি বিষয়ক নতুন প্রকল্প, জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ফেডারেল প্রোগ্রামের খরচ কমানো ইত্যাদি।
অন্যদিকে, ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে রিপাবলিকান নেতাদের ওপর দ্রুত আইন পাস করার চাপ বাড়ছে।
বর্তমানে, কংগ্রেস দু’সপ্তাহের বিরতিতে গেছে। তবে সবাই স্বীকার করছেন যে আসল কাজ এখন শুরু হবে। দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনও এরই মধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাত বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাটছাঁটের বিষয়টি নিয়ে অনেক সদস্যের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।
মেডিসাইড বিষয়ক প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য নিউ জার্সির প্রতিনিধি জেফ ভ্যান ড্রিউ জনসনকে সতর্ক করে বলেছেন, চূড়ান্ত বিলের কাঠামো তৈরির সময় তারা মুখ খুলবেন। তিনি বলেন, “যদি কেউ এমন কিছু করতে চায় যা মানুষের ক্ষতি করে, তাহলে আমরা তাদের সমর্থন করব না।
হোয়াইট হাউস এবং রিপাবলিকান নেতৃত্ব জানিয়েছে, প্রস্তাবিত কাটছাঁটগুলো সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার এবং মেডিসাইডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলোর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে অনেকেই এতে সন্দিহান।
মেইন থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স বলেছেন, “আমি মেডিসাইডে এমন কোনো কাটছাঁট সমর্থন করব না যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নিম্ন আয়ের পরিবার, প্রবীণ নাগরিক এবং গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর ক্ষতি করে।
আলাস্কার সিনেটর লিসা মুরকোওস্কি বলেছেন, “আমরা কীভাবে দুটি পক্ষের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করব, তা নিয়ে আমি চিন্তিত।
সাউথ ডাকোটার রিপাবলিকান জন থুন এই বিভাজন কমাতে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের উভয় দিকেই এই সমস্যা রয়েছে। আমাদের এর সমাধান করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন