আমেরিকার বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলো শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এক বিরাট দুঃস্বপ্ন ডেকে এনেছে। বিভিন্ন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তেমনই কমছে ভোক্তাদের কেনাকাটার পরিমাণ। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কোম্পানিগুলোর মুনাফা এবং বিনিয়োগের ওপর।
সম্প্রতি, পেপসিকো, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, চিপটল, আইবিএম, প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলো তাদের ত্রৈমাসিক আয়ের হিসাব প্রকাশ করে। সেখানেই তারা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে।
পেপসিকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রামন লাগুয়ার্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে, তারা তাদের বার্ষিক মুনাফার পূর্বাভাসও কমিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন সময় আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কের হার পরিবর্তন করেছে, যার মধ্যে চীনের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ ছিল উল্লেখযোগ্য। এর প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য দেশও পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে শুরু করে।
এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা প্রায় সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক বসানো হয়েছে। এমনকি চীনের থেকে আসা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে, যা কার্যত দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের শামিল।
এই নীতিগত অস্থিরতার কারণে আমেরিকান কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য সরবরাহকারী চিপটল জানিয়েছে, তারা তাদের দোকানে বিক্রি হওয়া খাদ্যপণ্যের উপকরণ, যেমন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা গরুর মাংস এবং পেরু থেকে আসা অ্যাভোকাডোর দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারীর পর এই প্রথম তাদের বিক্রি কমেছে। ভোক্তারা খরচ কমাতে শুরু করায় রেস্টুরেন্টগুলোতে তাদের আনাগোনা কমে গেছে।
এদিকে, প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, যারা প্যাম্পার্স, টাইড-এর মতো জনপ্রিয় পণ্য তৈরি করে, তারাও তাদের বার্ষিক বিক্রয়ের পূর্বাভাস কমিয়েছে। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন মোয়েলার জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং তারা পণ্যের উপাদান পরিবর্তনেও মনোযোগ দিচ্ছেন।
বিমান সংস্থা এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ও এই শুল্ক নীতির প্রভাব পড়েছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ডেল্টা, সাউথওয়েস্ট এবং আলাস্কা এয়ার তাদের আর্থিক পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ভাইস চেয়ার স্টিভ জনসন জানিয়েছেন, বিশেষ করে কম আয়ের মানুষজন এখন আগের চেয়ে কম ভ্রমণ করছেন।
পর্যটন নির্ভর শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের এক জরিপে জানা গেছে, পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় নিউইয়র্ক সিটির একটি হোটেল মালিক আন্তর্জাতিক বুকিং কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, কানাডা থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা আসার ঝুঁকি বাড়ছে। এপ্রিল মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ডাউ জোন্স সূচক ৯.১ শতাংশ কমেছে, যা ১৯৩২ সালের পর এপ্রিল মাসের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করছেন। বিলিয়নেয়ার এবং রিপাবলিকান দলের সমর্থক কেন গ্রিফিন বলেছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ আমেরিকার বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করছে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র শুধু একটি দেশ নয়, এটি একটি ব্র্যান্ড।
কিন্তু এই নীতির কারণে সেই ব্র্যান্ডের সম্মান কমছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন