মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA) এর বিশেষজ্ঞ প্যানেল আসন্ন শরৎ ও শীতকালে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এর উপাদান পরিবর্তন করা উচিত কিনা, সেই বিষয়ে তাদের মতামত দিচ্ছেন।
ভাইরাস ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করার কারণে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের নতুন স্ট্রেইন (strain) অনুযায়ী টিকা তৈরি করতে হচ্ছে।
এই আলোচনার মূল বিষয় হলো বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো এখনো কি যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারছে, নাকি নতুন ভ্যারিয়েন্ট (variant) যেমন এলপি.৮.১ (LP.8.1)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেগুলোকে আপডেট করা প্রয়োজন।
এছাড়াও, এফডিএ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে কোভিড-১৯ বুস্টার ডোজ (booster dose) শুধুমাত্র বয়স্ক এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ করা হবে।
এর ফলে সাধারণ মানুষের বুস্টার ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
তবে এর পাশাপাশি, এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক প্রশ্নও উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, এখন যদি কেউ বুস্টার ডোজ নিতে চান, তবে তা কিভাবে পাবেন? এছাড়া, স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলো কি এখনো সবার জন্য ভ্যাকসিনের খরচ বহন করবে?
এফডিএ-এর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতের ভ্যাকসিনগুলোর জন্য উপযুক্ত স্ট্রেইন নির্বাচন করা।
বৈঠকে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানি যেমন, ফাইজার (Pfizer), মডার্না (Moderna), এবং নোভাভ্যাক্স (Novavax)-কে নতুন স্ট্রেইন অনুযায়ী ভ্যাকসিন তৈরি করতে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
এফডিএ-এর ভ্যাকসিন বিষয়ক প্রধান ড. বিনয় প্রসাদ (Dr. Vinay Prasad) জানিয়েছেন, তারা চাচ্ছেন মানুষকে নতুন ভ্যাকসিন নীতি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা দিতে এবং তাদের মতামত গ্রহণ করতে।
গত বছর বাজারে আসা ভ্যাকসিনগুলো ভাইরাসের জেএন.১ (JN.1) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ওমিক্রন (Omicron) ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তৈরি করা হয়েছিল।
যদিও এই পরিবার এখনো প্রভাবশালী, তবে ভাইরাস ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আগের ভ্যাকসিনগুলো কি এখনো যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারবে, নাকি প্রস্তুতকারকদের আজকের দিনের সবচেয়ে সাধারণ সাব-টাইপ, এলপি.৮.১ (LP.8.1)-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization – WHO) জানিয়েছে, গত বছরের সংস্করণ এখনো কার্যকরী, তবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা চাইলে আপগ্রেড করতে পারে।
ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (European Medicines Agency) নতুন সাব-টাইপের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির পরামর্শ দিয়েছে।
তবে, এফডিএ-এর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দিষ্ট স্ট্রেইন-এর ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়নি।
তারা বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে এবং আশা করছে, বিজ্ঞানই বলে দেবে কখন ভ্যাকসিনের পরিবর্তন করা উচিত।
এই মুহূর্তে, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) তাদের নিজস্ব পরামর্শক প্যানেলের মাধ্যমে আগামী জুন মাসে শরৎকালের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুপারিশ করবে।
তাদের বিবেচনাধীন বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য রাখা, নাকি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিনেশন সুপারিশ করা এবং অন্যদের জন্য এটি ঐচ্ছিকভাবে রাখা।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনা এবং সিদ্ধান্তগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, কোভিড-১৯ এখনো বিশ্বজুড়ে একটি উদ্বেগের বিষয়। যদিও বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি চলছে, এবং সরকার ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তবুও এই ধরনের বৈশ্বিক আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)