ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: বিমান চলাচল ব্যাহত, বাতিল বহু ফ্লাইট।
গত কয়েক দশকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের জেরে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিমান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এশীয় বিমান সংস্থা এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তাদের ফ্লাইট হয় বাতিল করেছে, না হয় অন্য পথে ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
আকাশপথে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ পাকিস্তানের আকাশপথ বেসামরিক বিমানের জন্য কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের আকাশেও এখন খুব কম সংখ্যক বেসামরিক বিমান দেখা যাচ্ছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, ভারতীয় সামরিক বিমান উত্তর ভারতের আকাশে এবং একটি পাকিস্তানি সরকারি বিমান দেশটির দক্ষিণে উড়ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আকাশপথ সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক বিমানের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফ্লাইটরাডার২৪ (FlightRadar24) নামক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানগামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসা প্রায় ৫২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার সময় পাকিস্তানের আকাশসীমায় ৫৭টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করছিল।
করাচি বিমানবন্দরে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় আট ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার পর এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে।
শুধু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটই নয়, দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
এয়ার ইন্ডিয়া (Air India) জম্মু, শ্রীনগর, লেহ, যোধপুর, অমৃতসর, ভুজ, জামনগর, চণ্ডীগড় এবং রাজকোটের বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় এই শহরগুলোর উদ্দেশ্যে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আগামী ১০ই মে পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট স্থগিত থাকবে।
এছাড়াও, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট এবং আকাশা এয়ারের মতো ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোও পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ১০টি শহরের উদ্দেশ্যে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। মালয়েশিয়ার প্রধান বিমান সংস্থা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সও অমৃতসরগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে তাদের দুটি দীর্ঘ রুটের ফ্লাইট ঘুরিয়ে দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বাটিক এয়ার (Batik Air) লাহোর এবং ভারতের অমৃতসরগামী বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএম (KLM) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের উপর দিয়ে তাদের বিমান চালাবে না।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সও ৬ই মে থেকে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তাইওয়ানের ইভিএ এয়ার (EVA Air) জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে তারা ইউরোপের ফ্লাইটগুলোতে পরিবর্তন আনবে।
কোরিয়ান এয়ার বুধবার সিউল-ইনচন থেকে দুবাইগামী ফ্লাইটগুলো মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারতের উপর দিয়ে নতুন রুটে পরিচালনা করতে শুরু করেছে। থাই এয়ারওয়েজ বুধবার সকাল থেকে ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার গন্তব্যের ফ্লাইটগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্সও (Vietnam Airlines) জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কারণে তাদের ফ্লাইট পরিকল্পনা প্রভাবিত হয়েছে। তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইন্স (China Airlines) লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং রোমের মতো গন্তব্যের ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং কিছু ফ্লাইটকে জ্বালানি ভরার জন্য ব্যাংকক ও প্রাগে থামতে হচ্ছে।
বর্তমানে ভারত থেকে ইউরোপগামী কিছু ফ্লাইটকেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দেখা যাচ্ছে। লুফথানসা (Lufthansa) দিল্লি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টগামী একটি ফ্লাইট মঙ্গলবার রাতের তুলনায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সুরাটের কাছে আরব সাগরের দিকে মোড় নিয়ে দীর্ঘ পথ ধরে গেছে।
তবে, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স (Sri Lankan Airlines) জানিয়েছে, তাদের ফ্লাইট স্বাভাবিক আছে এবং পাকিস্তানের লাহোর ও করাচির উদ্দেশ্যে তাদের চারটি সাপ্তাহিক ফ্লাইটে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা