ভূমধ্যসাগরে নতুন ধরনের নৌ-ভ্রমণ: উপকূলীয় শহরগুলিতে ভ্রমণের এক আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা।

বর্তমান সময়ে নৌ-ভ্রমণের ধারণাটা যেন একটু অন্যরকম রূপ নিচ্ছে। বিলাসবহুল ক্রুজ লাইনের ভিড়ে এখন জনপ্রিয় হচ্ছে “এক্সপেডিশন ক্রুজ” বা অভিযানমূলক নৌ-ভ্রমণ।

এই ধরনের ভ্রমণে পর্যটকেরা শুধুমাত্র সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করেনা, বরং ছোট ছোট বন্দরগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ পায়, যা সাধারণত বড় ক্রুজ জাহাজগুলোতে যাওয়া হয় না।

এই নতুন ধরনের নৌ-ভ্রমণ এখন ভূমধ্যসাগরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে ঐতিহাসিক স্থান, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ থাকে।

এই বিশেষ ধরনের ভ্রমণগুলি সাধারণত ছোট আকারের জাহাজে করে হয়ে থাকে, যা বিভিন্ন উপকূলীয় শহরগুলোতে সহজে প্রবেশ করতে পারে।

এইসব জাহাজে করে ফ্রান্সের নিস থেকে যাত্রা শুরু করে স্পেনের মায়োর্কাতে ভ্রমণ শেষ করা যেতে পারে। যাত্রাপথে ফ্রান্সের রিভিয়েরা অঞ্চলের বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার চেখে দেখা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

এই ধরনের ভ্রমণে খাদ্যরসিকদের জন্য বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। যেমন, বার্সেলোনায় পায়েলা তৈরির কর্মশালা, মন্টেনিগ্রোর কোটরে ওয়াইন টেস্টিং এবং জাহাজে রিয়েলিটি-টিভি-অনুপ্রাণিত রান্নার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

এই অভিজ্ঞতাগুলো পর্যটকদের ভূমধ্যসাগরের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত করায়।

বিভিন্ন ক্রুজ কোম্পানি এই ধরনের ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে।

আটলাস ওশন ভয়েজেস (Atlas Ocean Voyages) তাদের “এপিকিউরিয়ান এক্সপেডিশনস” -এর মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

এখানে নামকরা শেফ, ওয়াইন প্রস্তুতকারক এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরণের খাবারের আয়োজন করে থাকেন।

ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহীদের জন্য পোন্যান্ট (Ponant) নামক ক্রুজ কোম্পানি বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণের প্রস্তাব দেয়।

তারা ফ্রান্সের রেডিও ক্লাসিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এজিয়ান সাগরে সাত রাতের একটি সঙ্গীত-কেন্দ্রিক ভ্রমণ আয়োজন করে।

এছাড়াও, স্মিথসোনিয়ান জার্নিস এবং অ্যাবারক্রোম্বি ও কেন্টের সাথে অংশীদারিত্বে মাল্টা, সিসিলি এবং সার্ডিনিয়া সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ করানো হয়।

এমনকি, ২০২৬ সালের আগস্টে স্পেনে সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য একটি বিশেষ ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

যারা একটু ভিন্ন ধরনের গন্তব্য পছন্দ করেন, তাদের জন্য সোয়ান হেলেনিক (Swan Hellenic) -এর ডায়ানা (Diana) নামক জাহাজ পর্তুগাল থেকে ইতালি পর্যন্ত ১১ রাতের একটি ভ্রমণ করায়।

এই যাত্রাপথে আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়ার মত কম পরিচিত স্থানগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ থাকে।

এখানে প্রাচীন কার্থেজের (Carthage) ধ্বংসাবশেষের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি ঘুরে দেখা যেতে পারে।

ছোট আকারের জাহাজগুলি গ্রিক দ্বীপপুঞ্জগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারে, যেখানে বড় ক্রুজগুলি যেতে পারে না।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অরিওন (National Geographic Orion) নামক জাহাজে করে আপনি নাক্সোস, সিফনোস এবং এমনকি জনমানবহীন ডেস্পোটিকোর মত স্থানে যেতে পারেন।

এই ধরনের ভ্রমণগুলি সাধারণত সময়ানুবর্তিতার চেয়ে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়, যা অপ্রত্যাশিত দৃশ্যের সাক্ষী হতে সাহায্য করে।

কিছু অভিযানের জাহাজে বিলাসবহুল সুবিধাগুলোও পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, সিবোর্ন ভেঞ্চার (Seabourn Venture) -এ বিশাল আকারের স্যুট এবং উন্নতমানের খাবার পাওয়া যায়।

এই ধরনের ভ্রমণে “রোলেক্স মন্টে-কার্লো মাস্টার্স” এবং “বার্সেলোনা ওপেন ব্যাংক সাবাডেল” টেনিস টুর্নামেন্টের মত বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকে।

আউরোরা এক্সপেডিশনস (Aurora Expeditions)-এর ডগলাস মওসন (Douglas Mawson) নামের জাহাজে করে শীতকালে আড্রিয়াটিক সাগর এবং গ্রীষ্মকালে ডালমেশিয়ান উপকূল, গ্রিস এবং তুরস্ক ভ্রমণ করা যেতে পারে।

এই জাহাজটির বিশেষত্ব হল এর ডিজাইন, যা জ্বালানি সাশ্রয়ে সাহায্য করে।

সুতরাং, যারা ঐতিহ্যবাহী নৌ-ভ্রমণের বাইরে নতুন কিছু চেষ্টা করতে চান, তাদের জন্য ভূমধ্যসাগরের এই “এক্সপেডিশন ক্রুজ” হতে পারে একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার