মিনিয়াপলিসের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান মেদারিয়া আর্রাডোনডোর কণ্ঠে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর মর্মান্তিক স্মৃতি। ২০২০ সালের ২৫শে মে, আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিসে, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা শুধু আমেরিকাতেই নয়, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি, এই ঘটনার পঞ্চম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে, তৎকালীন মিনিয়াপলিসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ প্রধান মেদারিয়া আর্রাডোনডো এক সাক্ষাৎকারে সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন।
আর্রাডোনডোর বয়স তখন ৫৮ বছর। তিনি জানান, ঘটনার দিন রাতে এক সমাজকর্মী তাকে ফোন করে জর্জ ফ্লয়েডের একটি ভিডিও দেখতে বলেন।
যেখানে দেখা যায়, শভিন নামের এক পুলিশ অফিসার ফ্লয়েডকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন, আর ফ্লয়েড “আমি শ্বাস নিতে পারছি না” বলে আর্তনাদ করছেন। আর্রাডোনডোর ভাষায়, “এটা ছিল একেবারে হৃদয়বিদারক।”
ভিডিওটি দেখার পর, আর্রাডোনডো বুঝতে পারেন, তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তিনি দ্রুতই উপলব্ধি করেন, ফ্লয়েডের মৃত্যু তার বিভাগ এবং শহরের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
যদিও শুরুতে তিনি এতটা অনুমান করতে পারেননি যে, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বে এত গভীর প্রভাব ফেলবে।
ঘটনার পাঁচ বছর পর, আর্রাডোনডো সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “আমি ৩২ বছর ধরে চাকরি করেছি। কিন্তু নিঃসন্দেহে, ২০২০ সালের ২৫শে মে আমার কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।”
তিনি আরও জানান, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে তিনি এবং তৎকালীন মেয়র জ্যাকব ফ্রে থার্ড প্রিসিংক্ট খালি করে দেন এবং সেটি পুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বিক্ষোভকারীরা যখন পুলিশের ওই স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী ছিল না। তাই জীবন বাঁচানোই ছিল তাদের প্রধান কাজ।
আর্রাডোনডো মনে করেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর পুলিশ বিভাগে জবাবদিহিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যদিও তা খুবই সামান্য।
তিনি জানান, এখনকার পুলিশ প্রধান ও শেরিফরা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
২০১৭ সালে আর্রাডোনডো যখন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন স্থানীয় আফ্রিকান-আমেরিকানরা তাকে “রন্ডো” নামে ডাকতেন। কিন্তু তার বিভাগের বিরুদ্ধে প্রায়ই বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠত। এমনকি পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের নিহত হওয়ার ঘটনাও ছিল।
আর্রাডোনডো স্বীকার করেন, ফ্লয়েডের মৃত্যুর আগে পুলিশ বিভাগে আরও পরিবর্তন আনা উচিত ছিল। তিনি বলেন, “আমি যদি আরও দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতাম, তাহলে হয়তো সেই রাতে এমনটা ঘটতো না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি অবশ্যই আমাদের সম্প্রদায়ের সেইসব মানুষের কথা বেশি গুরুত্ব দিতাম, যারা কয়েক দশক ধরে পুলিশের কাছে তাদের কথা শোনার এবং পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছিলেন।”
সম্প্রতি আর্রাডোনডো “চিফ রন্ডো: সিকিউরিং জাস্টিস ফর দ্য মার্ডার অফ জর্জ ফ্লয়েড” নামে একটি বই লিখেছেন। যেখানে তিনি নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার, বর্ণবাদ, পুলিশের কার্যক্রম এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বইটি তিনি জর্জ ফ্লয়েডের মেয়ে জিয়ান্না ফ্লয়েডের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন। আর্রাডোনডো বলেন, “জিয়ান্নার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি, তবে আমি তাকে জানাতে চাই যে, যদিও আমি সেই রাতে ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবুও আমি তার বাবার আর্তনাদ শুনেছি এবং তার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমি সবকিছু করব।”
তিনি আরও বলেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত চার অফিসারের কাছ থেকে জিয়ান্না যে কথাগুলো শোনেননি, সেই কথাগুলো তিনি বলতে চান: “আমি দুঃখিত। তোমার বাবাকে এভাবে হারানোর জন্য আমি দুঃখিত।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।