মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেমোরিয়াল ডে-তে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা: অতীতের স্মৃতিচারণ
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো মেমোরিয়াল ডে। প্রতি বছর এই দিনে দেশটির সামরিক বাহিনীর সেই সকল সদস্যদের স্মরণ করা হয়, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
এই বিশেষ দিনে, দেশটির প্রেসিডেন্টরা সাধারণত সামরিক কবরস্থানগুলোতে যান এবং নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা, শোক প্রকাশ করেন এবং আবেগপূর্ণ বক্তৃতা করেন।
আর্লিংটন ন্যাশনাল সেমেট্রিতে (Arlington National Cemetery), যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সমাধিস্থল, প্রতি বছর মেমোরিয়াল ডে-তে বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্টরা এখানে ফুল দিয়ে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুদ্ধ ও মিশনে নিহত সেনাদের স্মৃতিচারণ করা হয় এই দিনে।
বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের দেওয়া কিছু বক্তব্য এই দিনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
১৯৮২ সালের ৩১শে মে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান তার ভাষণে বলেছিলেন, “অন্যেরা যাতে বাঁচতে পারে, সেই জন্য কিছু মানুষের জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতা আমাদের মধ্যে বিস্ময় ও রহস্যের জন্ম দেয়। এই পবিত্র স্থানে সেই অনুভূতি অনুভব করা যায়।
আমি ইউরোপ, ফিলিপাইন এবং আমাদের দেশের সামরিক কবরস্থানগুলোতে শ্বেত ক্রুশ ও ডেভিড তারকাখচিত সারিবদ্ধ সমাধির দিকে তাকিয়ে একই গভীর অনুভূতি অনুভব করেছি। প্রতিটি স্থান একজন আমেরিকান বীরের বিশ্রামস্থল।”
পরবর্তীতে, ১৯৯৮ সালের ২৫শে মে, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, “আমার প্রিয় আমেরিকান নাগরিকবৃন্দ, এই মেমোরিয়াল ডে-তে, আসুন আমরা তাদের ত্যাগের যোগ্য একটি ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার করি।”
২০০২ সালের ২৭শে মে, ফ্রান্সের কলভিলে-সুর-মেরে (Colleville-sur-Mer) দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, “এমন একটা দিন আসবে যখন তাদের চেনা আর কেউ থাকবে না। যখন এই গোরস্থানে আসা কোনো দর্শনার্থী তাদের মুখ ও কণ্ঠস্বর মনে করতে পারবে না।
তবে এমন দিন কখনোই আসবে না যখন আমেরিকা তাদের ভুলে যাবে। আমাদের জাতি এবং বিশ্ব সর্বদা স্মরণ করবে তারা এখানে কী করেছে, তারা এখানে কী দিয়েছে, মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য।”
বারাক ওবামা, ৩০শে মে ২০১১ সালে বলেছিলেন, “আমাদের জাতি তারfallen heroes-দের কাছে ঋণী, যা আমরা কখনোই সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করতে পারব না, তবে আমরা তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে পারি, এবং আমাদের তা জানানো উচিত।”
২০১৮ সালের ২৮শে মে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, “তারা ছিলেন জেনারেল ও সাধারণ সৈনিক, ক্যাপ্টেন ও কর্পোরাল, সকল জাতি, বর্ণ এবং বিশ্বাসের মানুষ। তবে তারা সবাই ছিলেন অস্ত্রের ভাই ও বোন।
তারা সবাই তখন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, যেমন তারা এখন চিরকালের জন্য ঐক্যবদ্ধ, আমাদের মহান দেশের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার মাধ্যমে।”
সবশেষে, ২০২০ সালের ৩০শে মে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, “এটি আমাদের সময়ের মিশন। তাদের প্রতি আমাদের স্মৃতি শুধু সেই দিনটিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, যেদিন আমরা কিছুক্ষণ থামব এবং প্রার্থনা করব।
এটি প্রতিদিনের একটি প্রতিশ্রুতি হতে হবে, যা কাজ করতে, একত্রিত হতে এবং সেই মূল্যের যোগ্য হতে আমাদের সাহায্য করবে যা তারা দিয়েছে।”
মেমোরিয়াল ডে-র এই ঐতিহ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের গুরুত্ব তুলে ধরে। এই দিনে, নিহত সেনাদের স্মরণ করা হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সম্মান জানানো হয়।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।