কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কের অস্থিরতা, সংকটে ফিলাডেলফিয়ার একটি সমুদ্র খাদ্য ব্যবসা
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়েছে। কানাডা থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের ওপর আমেরিকার শুল্কের ঘন ঘন পরিবর্তন সেখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য এক নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফিলাডেলফিয়ার ‘ফিশটাউন সি ফুড’-এর মতো ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর, যারা তাদের ব্যবসার জন্য মূলত কানাডার ওপর নির্ভরশীল।
ফিশটাউন সি ফুডের মালিক ব্রায়ান সেলিগা জানান, তাঁর ব্যবসার প্রধান আকর্ষণ হল ঝিনুক। তাঁর দোকানের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ঝিনুক আসে কানাডা থেকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এই শুল্ক নীতির কারণে তিনি বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ব্যবসায়ীদের জন্য ছিল বিরাট ধাক্কা। এরপর কিছুদিনের জন্য সেই শুল্ক স্থগিত করা হলেও, ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
“এই ধরনের ‘হঠাৎ আক্রমণ’-এর মতো নীতি ব্যবসার জন্য খুবই ক্ষতিকর,” – এমনটাই মনে করেন ব্রায়ান সেলিগা। তাঁর মতে, ব্যবসায়ীরা আগে থেকে জানতে না পারলে, সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারেন না। ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো বা কম রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ব্রায়ান জানান, যদি শুল্ক বহাল থাকে, তাহলে তাঁকে হয়তো ঝিনুকের দাম বাড়াতে হবে এবং ক্রেতাদের জন্য ঝিনুকের বিভিন্নতাও কমাতে হতে পারে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সমুদ্র খাদ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে কানাডার অবদান ছিল প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সমুদ্র খাদ্য আমদানি ১০ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে ঝিনুকের চাহিদা বাড়ছে, যা এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। এমনকি, ২০২২ সালে ঝিনুক প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের শীর্ষ ১০-এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
কিন্তু শুল্কের এই অস্থিরতা সম্ভবত ঝিনুকের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ব্রায়ান সেলিগার আশঙ্কা, তাঁর মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী হয়তো তাঁদের দোকানে ঝিনুকের সরবরাহ কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন, যা ভোক্তাদের জন্য ভালো হবে না।
এই পরিস্থিতিতে, ব্রায়ান সেলিগা তাঁর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করছেন। তিনি তাঁর সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলে মেনু তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যাতে শুল্কের প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা যায়। যদিও দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ সরবরাহকারীরা ইতিমধ্যেই দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। ব্রায়ান মনে করেন, এই পরিস্থিতি তাঁদের ব্যবসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কানাডার সমুদ্র খাবারের এই শুল্ক-সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের ফলে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের জটিলতাকেই তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: