যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের ওপর নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া, চীনের সকল পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, মাদক চোরাচালান বন্ধ এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্যই এই পদক্ষেপ।
এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের মুরগি, গম, ভুট্টা, এবং তুলার ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া, কিছু খাদ্যপণ্য, ফল ও সবজির ওপরও শুল্ক বসানো হয়েছে। কানাডা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। মেক্সিকোও জানিয়েছে, তারা খুব শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে, গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং খাদ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কমে যাবে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, এই শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও, শুল্ক বাড়লে কাঁচামালের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করবে।
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি নতুন সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। অনেক দেশ এখন চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের বদলে বিকল্প বাজার খুঁজবে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন রপ্তানি বাজার তৈরি করতে পারে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই শুল্ক আরোপকে ‘বোকা’র মতো কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বন্ধু, আমাদের মধ্যে লড়াই হওয়াটা বিশ্বের শত্রুদের জন্য আনন্দের।”
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।