আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তাকে হাজির করা হয়।
দুতার্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন।
২০১৬ সাল থেকে দুতার্তের শাসনামলে মাদকবিরোধী অভিযান ব্যাপক সমালোচিত হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এই সময়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়, যদিও ফিলিপাইন সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যা ৬ হাজারের কিছু বেশি বলা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণেই মূলত তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুতার্তেকে আটকের খবর পাওয়ার পর ভুক্তভোগী পরিবার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তারা এটিকে ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, “গুরুতর অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি এবং এই পদক্ষেপ তারই অংশ।”
অন্যদিকে, দুতার্তের সমর্থকরা তার এই আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দুতার্তে।
ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের প্রশাসনকে তারা দুতার্তেকে এই আন্তর্জাতিক আদালতে তুলে দেওয়ার জন্য দায়ী করছেন।
৭৯ বছর বয়সী দুতার্তেকে মঙ্গলবার ম্যানিলা থেকে নেদারল্যান্ডসে আনা হয়।
আইসিসির অনুরোধের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
হেগের একটি আদালত সূত্র জানিয়েছে, দুতার্তের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরে তার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিল এবং সেখানে চিকিৎসক দল উপস্থিত ছিলেন।
আইসিসি জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই দুতার্তেকে আদালতে হাজির করা হবে।
সেখানে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হবে।
এরপর শুনানির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, প্রসিকিউটরদের কাছে তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কিনা এবং তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কিনা।
যদি তার বিচার হয় এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার পর ন্যায়বিচারের বিষয়ে আশাবাদী হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “হাজার হাজার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
এর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থানে, এমনকি সরকার প্রধানের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও যে গুরুতর অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পাবেন না, সেটি প্রমাণিত হবে।”
তবে, দুতার্তের সমর্থকরা এই গ্রেফতারকে অবৈধ বলে দাবি করছেন।
তারা তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
দুতার্তের মেয়ে ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে তার বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য হেগে গিয়েছেন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ফিলিপাইন সরকার আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
যদিও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দুতার্তেকে বিচারের আওতা থেকে বাঁচানো।
আইসিসির অভিযোগ, ২০১৬ সাল থেকে দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
বর্তমানে, আইসিসির বিচারকরা মনে করেন, দুতার্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে।
তাদের মতে, দুতার্তের গ্রেফতার তদন্তের স্বার্থে এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস