**এ্যাসপিরিন: ক্যান্সার প্রতিরোধে কি নতুন দিগন্ত? ঝুঁকিও রয়েছে?**
ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, যা সারা বিশ্বে উদ্বেগের কারণ। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। সম্প্রতি, একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিচিত একটি ঔষধ, যা আমরা সাধারণ ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করি, সেই এ্যাসপিরিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তবে, এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে।
গবেষণা জানাচ্ছে, এ্যাসপিরিন ক্যান্সারের বিস্তার (মেটাস্ট্যাসিস) কমাতে সাহায্য করতে পারে। ক্যান্সার কোষ যখন শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পরে, তখন তাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে। এটি ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ্যাসপিরিন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এই ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে, ক্যান্সার কোষগুলো যখন মূল টিউমার থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন শ্বেত রক্তকণিকা (T-সেল) এদের খুঁজে বের করে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু রক্তের ক্ষুদ্র কণা, যা প্লেটলেট নামে পরিচিত, এই প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। প্লেটলেটগুলো ক্যান্সার কোষের চারপাশে একটি আবরণ তৈরি করে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলোর পক্ষে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন করে তোলে। এছাড়াও, প্লেটলেট টি-সেল-এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এ্যাসপিরিন এই প্লেটলেটগুলোর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে টি-সেল ক্যান্সার কোষকে সহজে শনাক্ত করতে পারে এবং তাদের ধ্বংস করতে পারে।
এই গবেষণাটি মূলত ইঁদুরের উপর করা হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, অস্ত্রোপচারের পর যখন শরীরে ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন এ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এখনই ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য এ্যাসপিরিন ব্যবহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। কারণ এর কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এ্যাসপিরিন রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে, এটি পাকস্থলীতে আলসার এবং মস্তিষ্কে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজের অধ্যাপক রাহুল রায়চৌধুরীর মতে, “আমাদের গবেষণা ক্লিনিক্যাল স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের একটি আণবিক ব্যাখ্যা দেয়, তবে এর সঠিক প্রয়োগের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।” বর্তমানে, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড এবং ভারতের মত দেশগুলোতে এ্যাসপিরিনের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই পরীক্ষাগুলোতে দেখা হচ্ছে, কোন ধরনের রোগীদের জন্য এ্যাসপিরিন বেশি উপকারী হতে পারে এবং এটি নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকর কিনা।
কিছু মানুষের, যেমন যাদের লিন্চ সিন্ড্রোম (যেটা কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়), তাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য এ্যাসপিরিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদেরও হৃদরোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য এ্যাসপিরিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইতালির গ্যাব্রিয়েল ডি’আনুনজিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাওলা পাত্রিজ্ঞানির মতে, “আমরা ক্যান্সার গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। এই নতুন জ্ঞান উদ্ভাবনী চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে এবং অসংখ্য জীবন বাঁচাতে পারে।”
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, এবং এর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা এখনো কঠিন। তাই, এ্যাসপিরিন ক্যান্সার চিকিৎসায় কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় এ্যাসপিরিনের ব্যবহার এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তাই, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ্যাসপিরিন গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা