বিখ্যাত ব্রিটিশ শেফ, হেস্টন ব্লুমেন্থাল, যিনি তাঁর উদ্ভাবনী রন্ধনশৈলীর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, সম্প্রতি বাইপোলার-২ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়েছেন। এই খবরটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ই নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও সহায়ক।
ফ্রান্সে একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর, তিনি তাঁর অসুস্থতা এবং পুনরুদ্ধারের যাত্রা সম্পর্কে মুখ খুলেছেন।
হেস্টন ব্লুমেন্থালের রান্নাঘরের জগৎ ছিল এক ভিন্ন ধরনের। তিনি খাবারের স্বাদ এবং পরিবেশনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও শিল্পের এক অনন্য মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। তাঁর রেস্তোরাঁ ‘ফ্যাট ডাক’, যা আগামী আগস্ট মাসে ৩০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে, সেখানে তিনি খাবার পরিবেশনের নতুন নতুন কৌশল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। তাঁর এই উদ্ভাবনী মানসিকতার পেছনেও কি কোনো গভীর কারণ ছিল?
২০২৩ সালের নভেম্বরে, ব্লুমেন্থাল-এর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তিনি জানান, ঘটনার আগে তিনি অস্থির ছিলেন এবং তাঁর মন দ্রুত চিন্তা করছিল। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন, এমনকি রাতেও, এবং তাঁর স্ত্রী মেলানির সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হতো। ব্লুমেন্থাল জানান, তিনি একসময় নিজেকে নিজের জগতে বন্দী করে ফেলেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
হাসপাতালে ভর্তির আগে, ব্লুমেন্থাল-এর জীবনে আরও কিছু কঠিন সময় ছিল। তাঁর মা এবং বোনের মৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে শোকাহত করে। ব্লুমেন্থাল-এর বোনও বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। ব্লুমেন্থাল মনে করেন, পরিবারের এই মানসিক স্বাস্থ্যগত ইতিহাস তাঁর নিজের অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।
চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের মাধ্যমে ব্লুমেন্থাল-এর মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি এখন নিয়মিত ঘুমান এবং তাঁর দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তিনি তাঁর অতীতের ঘটনাগুলো স্মরণ করার চেষ্টা করছেন এবং এই রোগ থেকে সেরে ওঠার পথে নিজেকে একটি “হাঁটাচলা করা পরীক্ষা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ব্লুমেন্থাল-এর এই অভিজ্ঞতার আলোকে, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক রোগ, যা ব্যক্তির মেজাজ, শক্তি, কার্যকলাপ, মনোযোগ এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চরম আবেগ অনুভব করতে পারেন, যার ফলে তাঁদের আচরণে পরিবর্তন আসে। চিকিৎসকরা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ব্লুমেন্থাল-এর এই গল্প আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তাঁর আরোগ্য লাভের পথে ফিরে আসার গল্প অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এটি আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করে যে, মানসিক স্বাস্থ্য কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি জীবনের একটি অংশ, এবং এর জন্য সঠিক চিকিৎসা ও সহায়তার প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান