জিনিসপত্র কমানোর সহজ উপায়, যা আপনার জীবনকে করবে আরও সুন্দর।
আমাদের চারপাশে অনেক জিনিসপত্র জমে থাকে, যা হয়তো আমাদের কোনো কাজে লাগে না। সময়ের সাথে সাথে এগুলো শুধু জায়গা দখল করে, মানসিক চাপ বাড়ায়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় হলো অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা বা ডিক্লাটারিং (decluttering)। সম্প্রতি মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা’র ক্ষেত্রে ‘আনন্দ খুঁজে বের করা’র চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।
আমেরিকার মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মেরি ই. ডজিয়ারের গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক মানুষের মধ্যে জিনিসপত্র ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ে। এই ক্ষেত্রে, কোনো জিনিস সরিয়ে ফেলার সময় আনন্দ খোঁজার চেয়েও বেশি কাজ করে ব্যক্তি-স্বার্থ, অন্যের প্রতি সাহায্য করার মানসিকতা এবং নিজের মূল্যবোধ।
ড. ডজিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ‘জিনিসপত্র জমানোর অস্বাভাবিক প্রবণতা’ (hoarding disorder) নিয়ে গবেষণা করছেন। তার মতে, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষেরা যখন কোনো জিনিসপত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন তারা আনন্দ বা ভালো লাগার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন জিনিসটির সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা মূল্যবোধের বিষয়টি।
তাদের মনে হতে পারে, জিনিসটি হয়তো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে অথবা এটি তাদের পরিবারের স্মৃতি বহন করে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনার মা তার বিয়ের শাড়িটি হয়তো এখনো যত্ন করে রেখেছেন। কারণ, এটি তার কাছে একটি বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন।
এই শাড়িটি হয়তো এখন আর পরার মতো অবস্থায় নেই, কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই ধরনের স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে আবেগ এবং যুক্তির মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
ড. ডজিয়ারের পরামর্শ হলো, এই ধরনের ক্ষেত্রে আনন্দের পরিবর্তে নিজের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া।
তাহলে, জিনিসপত্র কমানোর সঠিক উপায় কী? ড. ডজিয়ারের গবেষণা থেকে জানা যায়, এই ক্ষেত্রে নিজের মূল্যবোধগুলো চিহ্নিত করা সবচেয়ে জরুরি।
এরপর, সেই মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন, আপনি যদি মনে করেন পরিবার এবং ঐতিহ্য আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে পরিবারের পুরনো কোনো ছবি বা ঠাকুরমা-দাদুর ব্যবহার করা কোনো জিনিস হয়তো আপনার কাছে রাখতে ভালো লাগবে।
আবার, আপনি যদি স্বাস্থ্য এবং সৃজনশীলতাকে বেশি গুরুত্ব দেন, তাহলে স্বাস্থ্যকর রান্নার কোনো রেসিপির বই আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
জিনিসপত্র কমানোর সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে পারেন:
ড. ডজিয়ারের গবেষণা থেকে জানা যায়, জিনিসপত্র কমানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে কাজ করা উচিত। এতে মানসিক চাপ কম হয় এবং কাজটি সহজ হয়।
পরিশেষে, মনে রাখতে হবে— প্রতিটি মানুষের মূল্যবোধ আলাদা। তাই, অন্যের কথা শুনে নয়, নিজের প্রয়োজন ও ভালো লাগার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই প্রবন্ধটি মূলত মেরি ই. ডজিয়ারের গবেষণা থেকে নেওয়া হয়েছে, যিনি মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক। লেখাটি The Conversation-এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং CNN তা পুনঃপ্রকাশ করেছে।