কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) এখন স্বাস্থ্যখাতেও তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
তবে এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই রয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি, রোগীদের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে জরুরি অবস্থার পূর্বাভাস দেওয়া পর্যন্ত, বিভিন্ন কাজে AI ব্যবহারের ফলে সেবকদের অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে, সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো এখন তাদের কর্মীদের কাজ সহজ করতে এবং কর্মী সংকট মোকাবিলায় AI প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আনা’ নামের একটি AI প্রোগ্রাম রোগীদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য প্রস্তুত করতে এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।
আনা হিন্দি, হাইতিয়ান ক্রেওলসহ বিভিন্ন ভাষায় রোগীদের সাথে কথা বলতে পারে। এই ধরনের প্রোগ্রামগুলো সাধারণত নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় সাশ্রয় করে।
তবে, নার্সিং ইউনিয়নগুলোর আশঙ্কা হলো, এই প্রযুক্তি কর্মীদের দক্ষতা হ্রাস করছে এবং রোগীর সেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, AI ব্যবহারের ফলে হাসপাতালের কর্মীরা অতিরিক্ত সতর্কতার সম্মুখীন হচ্ছেন, কারণ অনেক সময় AI ভুল সংকেত দেয়, যা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, নেভাদার একটি হাসপাতালের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে AI একটি রোগীকে সেপসিস (Sepsis) শনাক্ত করতে বলেছিল, কিন্তু একজন অভিজ্ঞ নার্স রোগীর কিডনি সমস্যা বিবেচনা করে ভিন্ন চিকিৎসা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল নার্সেস ইউনাইটেড-এর মতো সংগঠনগুলো AI ব্যবহারের বিষয়ে নার্সদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে বলছে এবং কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে। তারা মনে করে, AI প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নার্সদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন করা উচিত।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করে, AI নার্স ও ডাক্তারদের তথ্য সংগ্রহ ও রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে, যা তাদের কাজের চাপ কমায়। উদাহরণস্বরূপ, আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের সাথে কথা বলার জন্য AI ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর ফলে কর্মীদের ওভারটাইম করার প্রয়োজন হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, AI প্রযুক্তি স্বাস্থ্যখাতে কিছু ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, তবে মানুষের পরিবর্তে এটি ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
রোগীদের শারীরিক ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি এবং গন্ধের মতো সূক্ষ্ম বিষয়গুলো AI বুঝতে পারে না, যা অভিজ্ঞ নার্সরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নার্সিং পেশায় কর্মী সংকট চলছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনেক নার্স চাকরি ছেড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে AI প্রযুক্তি কর্মীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে, এর ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করে, এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে AI-এর ব্যবহার এখনো একটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
এই প্রযুক্তি কীভাবে রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। একইসাথে, কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, AI প্রযুক্তির ব্যবহার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে, তবে এর বাস্তবায়ন সতর্কতার সাথে করতে হবে। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।