মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে ফিরছেন নভোচারীরা: শরীরে ফিরছে স্বাভাবিকতা, জানা যাচ্ছে মহাকাশ ভ্রমণের প্রভাব।
দীর্ঘ নয় মাস মহাকাশে কাটানোর পর অবশেষে পৃথিবীর বুকে ফিরছেন দুই নভোচারী। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station – ISS) তাদের দীর্ঘ সময় কাটানো মহাকাশ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
মহাকাশে বসবাসের কারণে নভোচারীদের শরীরে যে পরিবর্তনগুলো আসে, তা নিয়ে গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। ফিরে আসার পরে, সেই পরিবর্তনগুলো কিভাবে তাদের শরীরে প্রভাব ফেলে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে নভোচারীদের শরীরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। এদের মধ্যে অন্যতম হলো হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, এবং শরীরের তরলের পুনর্বণ্টন।
মহাকর্ষ বলের অভাবে, নভোচারীদের শরীরে তরল পদার্থ শরীরের উপরের দিকে, বিশেষ করে মাথায় জমা হতে থাকে। এর ফলে তাদের মুখ ফুলে যায় এবং পায়ের মাংসপেশি চিকন হয়ে যায়।
অনেক সময় দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও দেখা দেয়।
নাসার (NASA) বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে থাকাকালীন নভোচারীদের উচ্চতা সামান্য বাড়ে, কিন্তু পৃথিবীতে ফেরার পর তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই পরিবর্তনের কারণ হলো, মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাব।
মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নভোচারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছু সময় লাগে। তাদের হাড় ও পেশিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ব্যায়াম করতে হয়।
এছাড়া, শরীরের তরলের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নাসার ফ্লাইট সার্জন ড. জো ডেরভেই (Dr. Joe Dervay) জানিয়েছেন, নভোচারীরা দ্রুত তাদের শরীরে পরিবর্তনগুলো মানিয়ে নিতে সক্ষম হন।
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
নভোচারীদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে নাসা বিশেষ খাদ্যতালিকা তৈরি করে এবং তারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করেন। এর মধ্যে ট্রেডমিল বা স্থিতিশীল বাইকের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, ওজন তোলার মতো ব্যায়ামের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, যা পৃথিবীর পরিবেশের মতোই। ড. ডেরভেই বলেন, “আমরা হাড় ও পেশীকে শক্তিশালী রাখার চেষ্টা করি, যাতে মহাকর্ষহীনতার প্রভাব কমানো যায়।”
মহাকাশ ভ্রমণের কারণে শুধু শারীরিক পরিবর্তনই নয়, মানসিক কিছু প্রভাবও দেখা যায়। অনেক নভোচারী পৃথিবীর বাইরের জগৎ থেকে ফিরে এসে এক ধরনের মানসিক অনুভূতির সম্মুখীন হন, যা ‘ওভারভিউ এফেক্ট’ নামে পরিচিত।
তারা পৃথিবীকে অন্যরকম চোখে দেখেন এবং মানুষের প্রতি তাদের সহানুভূতি বেড়ে যায়।
নাসা বর্তমানে এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছে, যাতে ভবিষ্যতে মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য মহাকাশে বসবাস করতে পারে। এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে, যা আমাদের পৃথিবীর মানুষের জন্যও উপকারী হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)