গাজাবাসীর জন্য ফিলিস্তিন ত্যাগ সহজ করতে ইসরায়েলের বিতর্কিত প্রস্তাব অনুমোদন।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করার জন্য একটি বিতর্কিত প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা। সমালোচকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি জাতিগত নির্মূলের শামিল হতে পারে। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি এরই মধ্যে অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে উঠেছে।
রবিবার ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়েভ গ্যালান্টের প্রস্তাব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় তৃতীয় কোনো দেশে যেতে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করা হবে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটবে।
এই সিদ্ধান্ত এমন একটি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, যা একসময় চরম ডানপন্থীদের কল্পনা হিসেবে বিবেচিত হতো। যদিও এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজার বেসামরিক নাগরিকদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস গাজা উপত্যকাকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, সেখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সেখানকার জীবনযাত্রাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজাবাসীর গণহারে দেশত্যাগ, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা থেকে স্বেচ্ছায় অন্য দেশে যেতে ইচ্ছুক বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে একটি প্রশাসন তৈরি করবে। এই প্রশাসনের কাজ হবে—গমন পথ তৈরি করা, গাজা উপত্যকার নির্দিষ্ট ক্রসিংগুলোতে নিরাপত্তা পরীক্ষা করা এবং লোকজনকে দেশত্যাগে সহায়তা করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনাকে ট্রাম্পের একটি আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হিসেবে তুলে ধরছেন। ট্রাম্পের এই আকাঙ্ক্ষা ছিল—গাজা অঞ্চলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, ফিলিস্তিনি জনসংখ্যাকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে দেওয়া এবং এটিকে একটি “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা”-য় পরিণত করা।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহীন সম্প্রতি সিএনএনকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূমিতে দৃঢ়ভাবে থাকতে চায় এবং তারা এখান থেকে সরবে না।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবিবার বলেছেন, তারা “মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি” বাস্তবায়নে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
যদিও ট্রাম্প সম্প্রতি এক বিবৃতিতে গাজাবাসীকে স্থানান্তরের বিষয়ে তার আগের মন্তব্যের কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কাউকে বিতাড়িত করা হচ্ছে না।”
অন্যদিকে, গত বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, তার দেশের ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা বা গাজা দখলের কোনো পরিকল্পনা নেই।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগের এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা পিস নাও। তারা বলেছে, “গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার জন্য প্রশাসন তৈরি করা—সরকারের সবচেয়ে নির্বোধ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি।”
আরব নেতারা, বিশেষ করে মিশর ও জর্ডান, এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। কারণ, এই দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থীর আগমন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, স্মোটরিচ জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণেরও অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, পশ্চিম তীরে বিদ্যমান বসতিগুলো থেকে ১৩টি এলাকাকে আলাদা করে স্বতন্ত্র বসতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন