হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ‘ফায়ারওয়াইজ’ প্রোগ্রাম: বাংলাদেশের জন্য দুর্যোগ মোকাবেলায় এক নতুন দিশা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগগুলোর সঙ্গে লড়তে হয় বাংলাদেশকে।
এমন পরিস্থিতিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে দাবানল থেকে বাঁচতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘ফায়ারওয়াইজ’ নামক একটি উদ্যোগ বিশেষভাবে নজর কাড়ছে। এটি আসলে দুর্যোগ মোকাবিলার এক অভিনব কৌশল, যা স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণে একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার ধারণা দেয়।
গত বছর, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে, হাওয়াইয়ের মাউইতে ভয়াবহ দাবানলে ‘লাহাইনা’ শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর সেখানকার মানুষজন উপলব্ধি করেন, প্রকৃতির দুর্যোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম ‘ফায়ারওয়াইজ’-এর। এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য হলো, দাবানলের ঝুঁকি কমাতে প্রতিটি এলাকার ঘরবাড়ির আশেপাশে আগুন লাগার মতো শুকনো লতাপাতা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ পরিষ্কার করা। এর মাধ্যমে বাড়িগুলোকে ‘ডিফেনসিবল স্পেস’ বা সুরক্ষিত স্থানে পরিণত করা হয়।
কয়েক বছর আগেও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের খুব কম সংখ্যক এলাকাতেই ‘ফায়ারওয়াইজ’ কার্যক্রম চলত। তবে লাহাইনার ঘটনার পর এর গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।
বর্তমানে ৩১টির বেশি কমিউনিটি এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং আরও অনেকে এতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
‘ফায়ারওয়াইজ’-এর ধারণা হলো, দুর্যোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্থানীয়রা নিজেরাই একত্রিত হয়ে তাদের এলাকার ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করেন এবং তা মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকে। যেমন, হাওয়াই ওয়াইল্ডফায়ার ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (HWMO) স্থানীয় কমিউনিটিগুলোকে ফায়ারওয়াইজ হতে সাহায্য করে।
তারা বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে এবং কীভাবে তা কমানো যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেয়।
এই প্রোগ্রামের অধীনে স্থানীয়রা তাদের এলাকার ঝোপঝাড় ও শুকনো ঘাস পরিষ্কার করে। এছাড়া, বাড়ির আশেপাশে আগুন লাগতে পারে এমন সব জিনিস সরিয়ে ফেলে।
অনেক ক্ষেত্রে, পুরনো গাছপালা কেটে ফেলা বা বাড়ির ছাদে অগ্নিরোধী উপকরণ ব্যবহারের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়। এসব কাজে আর্থিক সহায়তারও প্রয়োজন হয়, যা বিভিন্ন অনুদান ও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবানলের মতো ঘটনার মোকাবিলায় শুধু সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, একটি এলাকার প্রতিটি বাড়িঘর সুরক্ষিত না হলে, দুর্যোগের ঝুঁকি থেকেই যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এর গুরুত্ব বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, ‘ফায়ারওয়াইজ’-এর ধারণা আমাদের দেশের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে, আমাদেরও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্যোগের ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং তা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো অপরিহার্য। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবক দল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো এই ধরনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
হাওয়াইয়ের ‘ফায়ারওয়াইজ’ প্রোগ্রাম থেকে আমরা শিখতে পারি, দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এটি শুধু একটি এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না, বরং একটি শক্তিশালী ও দুর্যোগ সহনশীল সমাজ গঠনেও সহায়ক হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস