এক দিনের একটি দয়ার কাজ, আর তাতেই বদলে গেল জীবন! এমনটাই ঘটেছে বার্নাডেট রাসেলের জীবনে, যিনি গত ১৪ বছর ধরে প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করে আসছেন।
ঘটনাটি ২০১১ সালের, যখন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা চলছিল। সেই সময় বার্নাডেটের সাথে দেখা হয় ডেফোর্ড পোস্ট অফিসে, এক তরুণের সাথে।
ছেলেটির পরনে ছিল হুডি, বয়স কুড়ি কি বাইশের কাছাকাছি। বার্নাডেট মনে মনে ভেবেছিলেন, হয়তো এই পোশাকের কারণে ছেলেটিকে অনেকে খারাপ চোখে দেখছে।
তিনি যখন শুনলেন ছেলেটির কাছে টিকিট কেনার মতো টাকা নেই, তখন বার্নাডেট এগিয়ে এসে টিকিট কিনে দেন। এই সামান্য কাজটিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ছেলেটি বার্নাডেটকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছিল, যা তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেই ঘটনার পর, বার্নাডেটের মনে হলো, সমাজের খারাপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও, মানুষের প্রতি দয়া দেখানোর সুযোগ রয়েছে।
তিনি অনুভব করলেন, “সমাজে অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু সবার প্রতি দয়া দেখালে হয়তো অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব।”
এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করবেন। শুরুতে তিনি বুঝতে পারেননি, এই সিদ্ধান্তের ফল এত সুদূরপ্রসারী হবে।
তিনি সেই সময় খণ্ডকালীন কাজ করতেন এবং সমাজের খারাপ দিকগুলো নিয়ে হতাশ ছিলেন। তবে ভালো কাজ করার এই ব্রত তাকে নতুন পথের দিশা দেখায়।
ছোট ছোট ভালো কাজগুলো করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, মানুষের প্রতি দয়া দেখালে তারাও একই রকম আচরণ করে। তিনি খেয়াল করলেন, চারপাশে কত মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে।
তিনি সেই ভালো কাজগুলো সামাজিক মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে শুরু করেন, যা তাকে নতুন পরিচয় দেয়। বর্তমানে তিনি একজন নাট্যকার, গল্পকার, শিল্পী এবং লেখক।
তার নতুন বই, ‘কথোপকথন: দয়া’-এর মূল বিষয়বস্তু হলো, দয়া।
বার্নাডেটের ভালো কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। কখনো তিনি পথ চলতি কোনো অচেনা ব্যক্তিকে ভালোবাসার বার্তা লিখে দেন, আবার কখনো বয়স্ক কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করেন।
একবার এক স্টেশনে তিনি টিকিট কাটার জন্য সাহায্য করতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। তবে তিনি দমে যাননি।
বার্নাডেটের মতে, দয়া দেখানোর অর্থ শুধু ছোট ছোট কাজ করা নয়। এর একটি শক্তিশালী দিকও রয়েছে, যা অন্যায়কে রুখে দিতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
তিনি মনে করেন, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে কৃষক—সবারই তাদের কাজের কেন্দ্রে দয়া রাখা উচিত।
বার্নাডেট আরও বলেন, কারো প্রতি দয়া দেখাতে গেলে অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে, যারা ক্ষমতাশালী, তাদের প্রতি দয়া দেখানো কঠিন হতে পারে।
তবে তিনি বিশ্বাস করেন, “যদি আমরা সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের সেইসব মানুষের সাথে গভীর আলোচনা করতে হবে, যারা ভিন্নমত পোষণ করে এবং তাদের কথা শুনতে হবে।”
বার্নাডেট মনে করেন, প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করা। তিনি বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে সমাজের অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তিনি চান, তার বই পড়ে বা আলোচনা শুনে, সবাই যেন বুঝতে পারে, তারা তাদের ক্ষুদ্র কাজের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে।
বার্নাডেটের মতে, নিজের প্রতিও দয়া দেখানো প্রয়োজন। সবারই উচিত, নিজের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেওয়া।
তিনি মনে করেন, মানুষের অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে, আবার জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধের মতো বড় সমস্যাও রয়েছে। তাই অন্যদের কষ্ট দেখে অনেক সময় ভয় লাগে।
বার্নাডেট একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি গৃহহীন ছিলেন এবং একসময় নারীদের প্রতি সহিংস ছিলেন। বার্নাডেট তার প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন।
তিনি মনে করেন, ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের পরিবর্তন সম্ভব।
বার্নাডেটের মতে, ছোট ছোট দয়ার কাজগুলো সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্বাস করেন, “ছোট ছোট দয়ার কাজগুলো শুধু অন্যদের জন্যই নয়, নিজের জন্যও উপকারী।”
বার্নাডেট তার ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি শৈশবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ভালো কাজ করার পর তিনি তার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি লেখেন এবং সেই চিঠি পুড়িয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, “এই ঘটনার পর আমি শান্তি অনুভব করেছি।”
বার্নাডেট মনে করেন, যারা কষ্ট পায়, তাদের প্রতি সহানুভূতি রাখা উচিত। তিনি বিশ্বাস করেন, “পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।”
বার্নাডেটের এই যাত্রা আমাদের শিক্ষা দেয়, প্রতিদিনের একটি ছোট কাজও আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian