যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি : ট্রাম্পের শুল্কের খেসারত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমেরিকানরাই।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুল্ক আরোপের ফলস্বরূপ, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমেরিকান নাগরিকরাই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে শুল্ক আরোপের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার কৌশলগত দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি, অনেক আমেরিকান তাদের চাকরি হারাতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি প্রণয়নে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। এমনকি শুল্ক গণনার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এই ধরনের অপরিকল্পিত পদক্ষেপ কোনো সমাধান নয়, বরং তা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই নীতির কারণে ইতিমধ্যে মার্কিন শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা স্টিললান্টিস (Stellantis), যারা জীপ ও ক্রাইসলারের মতো গাড়ির নির্মাতা, এরই মধ্যে ৯০০ জন আমেরিকান কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও, তারা কানাডা ও মেক্সিকোতে তাদের কিছু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ এবং পিটারসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মেরি ই. লাভেলি (Mary E. Lovely) মনে করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তার মতে, উন্নত বিশ্বের শ্রমবাজারের চাহিদা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া এখন অনেক আধুনিক। তাই, নিম্ন-দক্ষ শ্রমিকনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
এই নীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে, যা সরাসরি আমেরিকানদের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। কফি, ওয়াইন, এবং প্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ পদার্থের দামও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শেয়ার বাজারের এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, “আমি মনে করি, এটা বেশ ভালোভাবেই চলছে।” তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর ফলে, ফ্রান্স ও কানাডার মতো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক নীতির কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্পর্ক পরিবর্তন, এবং বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN