যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রপ্তানিকারক বোয়িং-এর আকাশে এখন কালো মেঘ। একদিকে যেমন উড়োজাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কের খড়গ, তেমনই চীনসহ বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য নীতির কোপে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এর ফলে শুধু বোয়িং নয়, বিশ্বজুড়ে বিমান পরিবহন শিল্পে দেখা দিতে পারে গুরুতর প্রভাব।
বোয়িংয়ের সমস্যাগুলো যেন কাটতেই চাইছে না। কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তা ত্রুটি, কারিগরি সমস্যা, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চাহিদা কমে যাওয়া, ইত্যাদি নানা কারণে কোম্পানিটি ধুঁকছে। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে শুল্কের বোঝা।
অন্যদিকে যেমন চীন-আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে চীনে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ রপ্তানি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তেমনই উড়োজাহাজ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতেও বাড়ছে খরচ।
জানা গেছে, চীনের বাজারে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাণিজ্য বিরোধের কারণে এখন এয়ারবাসের মতো ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো সেখানে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। চীনের ক্রেতারা এখন বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি চীনের উদ্দেশ্যে পাঠানো কয়েকটি বোয়িং উড়োজাহাজও ফিরিয়ে নিতে হয়েছে।
বোয়িংয়ের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, তাদের উড়োজাহাজ তৈরির ৮০ শতাংশ যন্ত্রাংশ আসে বিদেশ থেকে। বিশেষ করে, বোয়িং-এর সবচেয়ে মূল্যবান উড়োজাহাজ ৭87 ড্রিমলাইনারের উইং তৈরি হয় জাপানে। ফলে, এই যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়লে উড়োজাহাজের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে আকাশ পথের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বোয়িং-এর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন উড়োজাহাজ তৈরির খরচ বাড়ছে, তেমনই চীনে বাজার হারানোর ফলে বিক্রিও কমছে। পরিস্থিতি যদি এমনই চলতে থাকে, তবে তা শুধু বোয়িংয়ের একার জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও অশনি সংকেত।
কারণ, বোয়িং আমেরিকার বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং এর সাথে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।
বোয়িংয়ের এমন সংকটকালে এর সরবরাহকারীরাও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। জানা গেছে, যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী অনেক কোম্পানি তাদের চুক্তি রক্ষা করতে পারছে না। ফলে, উড়োজাহাজ নির্মাণ প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠছে।
বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোয়িং জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জটিলতা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বোয়িং কিভাবে এই সংকট কাটিয়ে ওঠে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন