কর্মক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এক দারুণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, গুগল-এর এক গবেষণায় জানা গেছে, এআই ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিলে কর্মীরা প্রশাসনিক কাজগুলোতে বছরে প্রায় ১২২ ঘণ্টা সময় বাঁচাতে পারে।
উন্নত বিশ্বে এর ইতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর সুফল পাওয়ার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
গুগল-এর এই গবেষণা মূলত যুক্তরাজ্যের কর্মপরিবেশের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, এআই ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মীদের কাজের ধরন অনেক সহজ হয়ে যায়।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মীদের যদি এআই ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং কিছু প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, তাহলে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বিগুণ হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক কর্মী, বিশেষ করে বয়স্ক নারী ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা যায়। কর্মীদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে যে, তারা হয়তো জানেন না কিভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়।
তাই, তাদের মধ্যে ‘প্রম্পট করার অনুমতি’ বা ‘কিভাবে ব্যবহার করতে হবে’ সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাটা খুব জরুরি। এই সমস্যা সমাধানে, কর্মীদের জন্য সহজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা যেতে পারে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হবে।
উদাহরণস্বরূপ, গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ শুরুর আগে, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ কর্মী এআই ব্যবহার করতেন সপ্তাহে একবার, এবং ৯ শতাংশ করতেন প্রতিদিন।
কিন্তু প্রশিক্ষণের পর, ৫৬ শতাংশ নারী সপ্তাহে একবার এবং ২৯ শতাংশ প্রতিদিন এআই ব্যবহার করতে শুরু করেন।
যুক্তরাজ্যে এই গবেষণার ফল অত্যন্ত উৎসাহজনক। যদি আমরা এই ধারণাটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করি, তাহলে আমাদের দেশের কর্মীদের জন্য এটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি), কৃষি ও গ্রাহক পরিষেবা-র মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে এআই ব্যবহারের সম্ভাবনা অনেক। এর ফলে, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসার উন্নতি ঘটবে।
তবে, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা, সেইসাথে কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
গুগল-এর এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে, আমরাও উন্নত দেশগুলোর মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন