নতুন দিল্লী (এপি) – বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন এর ঢেউ লেগেছে খেলনার বাজারেও। বিশেষ করে চীন থেকে আসা খেলনার ওপর মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মন্তব্যের জেরে এই আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে। ট্রাম্প শিশুদের ৩০টির বদলে দুটি পুতুল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার কথা বলেছিলেন, যা অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত।
এই মন্তব্যের পরেই খেলনা প্রস্তুতকারক এবং অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, খেলনার দাম বাড়লে শিশুদের খেলনা কেনা কঠিন হয়ে পড়বে। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি খেলনা প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রধান জোনাথন ক্যাথে বলেছেন, “মনে হচ্ছে যেন ‘কেক খাও’ ধরণের একটি মন্তব্য, যা ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।”
আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ খেলনা আসে চীন থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে খেলনা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো বেশ বিপাকে পড়েছে। তারা এই শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
খেলনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি সংগঠন, ‘দ্য টয় অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, শুল্ক বহাল থাকলে আসন্ন ছুটির মৌসুমে খেলনার সংকট দেখা দিতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুতুলের বাজার একটি বিশাল ব্যবসা। বার্বি, ব্র্যাটজ, এবং আমেরিকান গার্লের মতো জনপ্রিয় পুতুলগুলি এই বাজারের প্রধান অংশীদার। বাজার গবেষণা সংস্থা ‘সারকানা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুলের বাজার ছিল প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মানুষজন শিশুদের ব্যস্ত রাখার জন্য খেলনা কিনতে বেশি আগ্রহী ছিল, কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে এখন খেলনার বিক্রি কমে গেছে। ‘সারকানা’র প্রধান খুচরা পরামর্শদাতা মার্শাল কোহেন বলেছেন, অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে মেকআপ ও ত্বকের যত্নের প্রতি আগ্রহ বাড়ায় পুতুলের চাহিদা কিছুটা কমেছে।
শুল্কের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য খেলনা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম খেলনা প্রস্তুতকারক ‘ম্যাটেল’ জানিয়েছে, শুল্কের কারণে তাদের কিছু পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে। তারা চীনের বাইরে অন্যান্য দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ছোট খেলনা কোম্পানিগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, খেলনার গুণগত মান এবং নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শুল্কের কারণে খেলনার দাম বাড়লে, ক্রেতারা কম দামের নকল খেলনার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, চীন থেকে আসা খেলনাগুলোতে সীসার মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন (সিপিএসসি)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা পরীক্ষাগারগুলোতে খেলনার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত, ফিশার-প্রাইস, ম্যাটেল, হাসব্রো এবং লেগোর মতো বড় ব্র্যান্ডগুলি এই নিয়ম মেনে চলে। তবে অনলাইনে খেলনা বিক্রির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চীন থেকে সরাসরি আসা খেলনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি কিছুটা বেশি।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে শিশুদের খেলনা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে এবং অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। অনেকের মতে, শিশুদের জন্য খেলনা কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তাদের বিকাশে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাধারণ মানুষ মনে করেন, অতিরিক্ত খেলনার সংস্কৃতি ভালো না। তাদের মতে, কম খেলনা শিশুদের জন্য ভালো। কিন্তু খেলনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মনে করেন, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের জন্য ভালো খেলনা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সুতরাং, এই বাণিজ্য যুদ্ধ একদিকে যেমন খেলনা ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলেছে, তেমনই শিশুদের খেলনা পাওয়ার সুযোগকেও সীমিত করছে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও খেলনা প্রস্তুতকারকরা কী পদক্ষেপ নেয়।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস