স্কটল্যান্ডের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে বিশ্ব মঞ্চে: ব্রডকাস্টার এডিথ বোম্যানের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা
স্কটল্যান্ডের ফাইফ অঞ্চলের একটি শান্ত গ্রাম আনস্ট্রুথার। এখানেই জন্ম ব্রডকাস্টার এডিথ বোম্যানের, যিনি আজ সারা বিশ্বে পরিচিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি এবং তাঁর মা, এলিওনর বোম্যান, তাঁদের জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
তাঁদের এই গল্প, মা ও মেয়ের অটুট বন্ধন, প্রতিকূলতা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এডিথের শৈশব কেটেছে আনস্ট্রুথারের একটি পারিবারিক হোটেলে। হোটেলটি ছিল তাঁদের কাছে বাইরের জগৎ উন্মোচনের এক জানালা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের সঙ্গে মিশে, তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।
মায়ের কাছ থেকে তিনি কাজ করার মানসিকতা ও মানুষের সঙ্গে কথা বলার কৌশল শিখেছেন। এডিথ জানান, তাঁর মা সব সময় তাঁর পাশে ছিলেন, সাহস জুগিয়েছেন।
ছোটবেলায় এডিথের রেডিওতে কাজ করার স্বপ্ন জাগে। স্থানীয় রেডিও স্টেশনে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার পর, তিনি এডিনবার্গে কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটি কলেজে যোগাযোগ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি এমটিভি ইউকে-তে একজন সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
তাঁর স্কটিশ উচ্চারণ নিয়ে অনেকে আপত্তি জানালেও, তিনি নিজের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এডিথ মনে করেন, তাঁর স্কটিশ পরিচয়ই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল। তিনি বলেন, “আমি খুবই খুশি যে আমি আমার নিজের পরিচয়ে অটল ছিলাম, কারণ এটাই আমাকে আলাদা করেছে।”
এডিথের মা এলিওনর বোম্যান সব সময় মেয়েকে সমর্থন করেছেন। এডিথের সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। এলিওনর জানান, এডিথ ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি ছিল এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সব সময় চেষ্টা করত।
একবার, রেডিওতে কাজ পাওয়ার জন্য এডিথকে তাঁর উচ্চারণ পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি। এলিওনর মেয়ের এই আত্মবিশ্বাসে গর্বিত।
মা ও মেয়ের সম্পর্ক এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কঠিন সময়েও তাঁরা একে অপরের পাশে ছিলেন। এলিওনরের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, এডিথ মায়ের পাশে ছিলেন।
মা-মেয়ের এই গভীর সম্পর্ক তাঁদের জীবনে আরও বেশি শক্তি জুগিয়েছে।
এডিথ বোম্যান আজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে পরিচিত মুখ। তিনি বিবিসি রেডিও ১, রেডিও ২ এবং ৬ মিউজিকের মতো জনপ্রিয় রেডিও স্টেশনে কাজ করেছেন। তাঁর উপস্থাপনা দক্ষতা ও সাবলীলতার জন্য তিনি পরিচিত।
তাঁর সাফল্যের পেছনে ছিল মায়ের অনুপ্রেরণা এবং নিজের প্রতি অবিচল বিশ্বাস।
এডিথ এবং তাঁর মায়ের গল্প আমাদের দেখায়, কীভাবে পরিবার ও আত্মবিশ্বাসের জোরে একজন মানুষ জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করতে পারে। তাঁদের এই যাত্রা, আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান