কাশ্মীরে বিড়াল নিয়ে আতঙ্ক, গুজব আর বাস্তবতা
শ্রীনগর, কাশ্মীর – ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিড়াল প্রেমীদের মধ্যে সম্প্রতি এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত কিছু ভুয়া খবর এবং ভুল ধারণার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবরগুলোতে বলা হয়, বিড়াল নাকি মানুষের মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে এবং মহিলাদের গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
এই গুজবের শুরুটা হয়েছিল সেখানকার পশুচিকিৎসকদের একটি সতর্কবার্তার মাধ্যমে। তাঁরা জানান, ভ্যাকসিন না নেওয়া এবং বেওয়ারিশ বিড়ালদের অযত্ন করার কারণে বিড়ালদের মধ্যে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কিন্তু তাঁদের এই সতর্কবার্তাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয় এবং দ্রুত সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আতঙ্কের কারণে, কাশ্মীর উপত্যকার মানুষজন তাদের পোষা বিড়ালদের নিয়ে পশুচিকিৎসকের কাছে ছুটতে শুরু করে। শ্রীনগরের প্রধান পশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত সপ্তাহে তারা ২,৫৯৪টি বিড়ালের চিকিৎসা করেছেন, যেখানে গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১,০১০।
এই পরিস্থিতিতে, কাশ্মীরের প্রাণী সম্পদ বিভাগ একটি বিবৃতি জারি করে। বিবৃতিতে বলা হয়, “যদি স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা হয়, তাহলে বিড়াল পোষায় কোনো সমস্যা নেই।”
কাশ্মীরে বিড়ালকে ভালোবাসার একটি বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। মুসলিম সংস্কৃতিতে বিড়ালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সম্মানিত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখানকার অনেক পরিবারে বিড়ালকে পরিবারের সদস্যের মতোই দেখা হয়।
শ্রীনগরের বাসিন্দা মীর মুবাশির জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবরগুলো তাকে বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তিনি তার পার্সিয়ান বিড়াল ‘লাইগার’-কে নিয়ে পশুচিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন, নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে সে সুস্থ আছে। পশুচিকিৎসক সব ঠিক আছে বলার পরেই তিনি শান্ত হন।
কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্থিরতা এবং মাঝে মাঝে লকডাউনের কারণে অনেকে মানসিক শান্তির জন্য বিড়াল পোষা শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা একে ‘পোষ্য থেরাপি’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল হওয়ার পর এবং ২০২০ সালের করোনা মহামারীর সময় এখানে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। সেই সময় অনেকেই ঘরবন্দী হয়ে পড়েন এবং একাকিত্ব কাটাতে বিড়াল পোষা শুরু করেন।
তবে, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন পশুচিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার, টিকা দেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে বিড়াল পোষায় কোনো ঝুঁকি নেই।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস