নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবেন কিনা, সেই আশায় দিন গুনছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি এলাকার মানুষ। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় স্থানীয় একটি মুদি দোকানে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন সম্প্রতি মেক্সিকো, কানাডা এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক (ট্যারিফ) বসিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এর ফলে অনেক খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। দেশটির গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ওপর তাঁদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
কিনিটানিংয়ের একটি মুদি দোকানের মালিক রিয়ান স্প্রাঙ্কেল। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করেন, প্রথম দিনেই মূল্যস্ফীতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। তিনি বলেন, “নির্বাচনে জয়ী হতে প্রার্থীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এক মাসের মধ্যে পুরো অর্থনীতির পরিবর্তন করা সম্ভবত বাস্তবসম্মত নয়। তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় আমি আশাবাদী।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় সূচক (Personal Consumption Expenditures বা PCE) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ডিসেম্বরের ২.৬ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম। ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের মধ্যে রাখা। তবে খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি, যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ।
মেক্সিকো ও কানাডা থেকে ফল, সবজি, শস্য এবং মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। শুল্কের কারণে খুব দ্রুতই এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। একটি মার্কিন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির একটি বৃহৎ চেইন স্টোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান কর্নেল বলেছেন, মেক্সিকোর ওপর ট্রাম্পের শুল্কের কারণে হয়তো চলতি সপ্তাহেই ফল ও সবজির দাম বাড়াতে হতে পারে।
২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি দেশটির ইতিহাসে ৪১ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ট্রাম্প এই সময়টাতে মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে এর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে অনেকে মনে করেন, দ্রব্যমূল্য এখনো তাদের উদ্বেগের কারণ। কিনিটানিংয়ের আরেক বাসিন্দা ব্রায়ান ম্যাকগ্রাথ জানান, তিনি ডেমোক্রেট দলের সমর্থক হলেও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি মনে করেন স্থানীয় অর্থনীতি তেমন একটা এগোচ্ছিল না। যদিও ডিসেম্বরে পেনসিলভানিয়ার বেকারত্বের হার ছিল জাতীয় গড়ের চেয়ে কম, তারপরও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে।
কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন যে, শুল্কের পাশাপাশি গণহারে লোকজনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর (mass deportations) মতো পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা জোলেইন ম্যাকইলওয়াইন বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে এলাকার অনেক মানুষ হতাশ। স্থানীয় একটি কফি শপে তিনি প্রায়ই শোনেন, মানুষজন গাড়ি কেনার ঋণ বা ডিম কেনার মতো প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে।
স্প্রাঙ্কেল মনে করেন, আগামী চার বছর উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, এই সময়ের মধ্যেই বোঝা যাবে, নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সঠিক ছিল কিনা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন