আজ থেকে আড়াইশো বছর আগে, ১৭৭৫ সালে, “আমাকে স্বাধীনতা দাও, না হয় মৃত্যু দাও!” – এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন প্যাট্রিক হেনরি।
আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দেওয়া তাঁর এই ভাষণ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। স্বাধীনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা কিভাবে একটি জাতির মানুষকে একত্রিত করতে পারে, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, ১৭৭৫ সালের সেই সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আমেরিকার উপনিবেশগুলোতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল।
ব্রিটিশ সরকার উপনিবেশগুলোর উপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করতে শুরু করে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে ভার্জিনিয়ার আইনজীবী ও আইনপ্রণেতা প্যাট্রিক হেনরি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য উপনিবেশবাসীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণটি জনগণের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে, যা স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
প্যাট্রিক হেনরির এই বিখ্যাত উক্তিটি শুধু একটি কথার কথা ছিল না, বরং তা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার মানুষের প্রতিবাদের এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ।
এই একটি বাক্য, “আমাকে স্বাধীনতা দাও, না হয় মৃত্যু দাও!” স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন থাকার এক চূড়ান্ত বার্তা বহন করে। এই বক্তব্য পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
১৯৮৯ সালের চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত, এই উক্তিটি বিভিন্ন সময়ে মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। এমনকি, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের সমান অধিকারের দাবিতে ১৯৬৪ সালে মালকম এক্স তাঁর ভাষণে এই কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তবে, প্যাট্রিক হেনরির এই ভাষণটি নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, তাঁর ভাষণের মূল শব্দগুলো হুবহু পাওয়া যায় না, কারণ তিনি তা লিখে রাখেননি। তবে, তাঁর বক্তব্য যে স্বাধীনতা ও আত্মত্যাগের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ভাষণের মূল বার্তা ছিল, ব্রিটিশ শাসনের অধীন জীবন যাপনের চেয়ে স্বাধীনতা মানুষের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।
প্যাট্রিক হেনরির এই ভাষণ আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
এটি স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও আমরা এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাই, যেখানে মানুষ জীবন উৎসর্গ করে হলেও স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছে।
প্যাট্রিক হেনরির সেই বিখ্যাত উক্তিটি তাই শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি চিরন্তন বার্তা, যা যুগে যুগে মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস