শিরোনাম: ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীদের উপর দমননীতি
গত মার্চ মাসের শুরুতে, নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক বিভাগ (আইস)। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় খলিলের বিরুদ্ধে ভিসা বাতিলের অভিযোগ আনা হয়। তাকে প্রথমে নিউ জার্সিতে আটক রাখা হয় এবং পরে লুইজিয়ানায় স্থানান্তরিত করা হয়।
যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চলছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং এর ফলে ফিলিস্তিনিদের উপর চালানো নৃশংসতার প্রতিবাদ জানায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল কঠোর। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ডাকা হয় এবং অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে “দ্য এনক্যাম্পমেন্টস” নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে, যেখানে বিক্ষোভের ভেতরের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যচিত্রে দেখা যায়, কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিল।
কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যমে এই বিক্ষোভকে সহিংস ও বিদ্বেষপূর্ণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তথ্যচিত্রটিতে কর্তৃপক্ষের দমননীতি এবং বিক্ষোভকারীদের উপর নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৬০-এর দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ—কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস। অতীতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মানবিক ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও স্বীকৃতি দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরে, তারা পুলিশের সাহায্য নেয়। শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনাগুলো ক্যাম্পাসকে কার্যত একটি পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত করে।
তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন কেই প্রিটসকার এবং মাইকেল টি ওয়ার্কম্যান। এতে দেখা যায়, কীভাবে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে, প্রতিবাদকারীরা তাদের দাবি থেকে সরতে রাজি নয়।
তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের উপর বোমা হামলা এবং তাদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কথা বলাটা জরুরি।
এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, তাদের প্রতিবাদ তাদের জন্য আরও বেশি বিপদ ডেকে আনতে পারে। কিন্তু তারা মনে করে, ফিলিস্তিনের মানুষ যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে কেউই নিরাপদ নয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান