দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে নারীর লাশ: রহস্য উন্মোচনে নতুন নেটফ্লিক্স ডকুসিরিজ।
যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ডে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। গিলগো বিচ এলাকার আশেপাশে বেশ কয়েকজন নারীর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ঘটনার তদন্ত এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি পুলিশের উদাসীনতা নিয়ে তৈরি হয়েছে নেটফ্লিক্সের নতুন ডকুসিরিজ ‘গন গার্লস: দ্য লং আইল্যান্ড সিরিয়াল কিলার’। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এই সিরিজে ঘটনার শিকার নারীদের পরিবার এবং ঘটনার পেছনের আরও অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গিলগো বিচ এলাকার নির্জন হাইওয়েতে পাওয়া যাওয়া লাশগুলো মূলত যৌনকর্মী নারীদের ছিল। তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি পুলিশের অবহেলার কারণে এই সিরিয়াল কিলিংয়েরহত্যাকারীকে শনাক্ত করতে অনেক বছর লেগে যায়।
ডকুসিরিজটি সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে, যখন নিহত নারীদের পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের হত্যার বিচার চেয়ে দিনের পর দিন পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে।
তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে একটি বড় কারণ ছিল স্থানীয় পুলিশ বিভাগের দুর্নীতি। ডকুসিরিজে উঠে এসেছে, তৎকালীন পুলিশ প্রধান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কিভাবে ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল।
ঘটনার শিকার নারীদের সামাজিক অবস্থান এবং তাদের পেশার কারণেও অনেকে পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে দ্বিধা বোধ করতেন। তাদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
২০২৩ সালে, অবশেষে রেক্স হিউয়ারম্যান নামে এক ব্যক্তির গ্রেপ্তার হয়, যিনি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি পেশায় একজন স্থপতি ছিলেন এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করতেন।
তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিমদের ওপর নজর রাখতেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতেন।
ডকুসিরিজটিতে ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার রয়েছে, যেখানে তারা তাদের স্বজন হারানোর বেদনা এবং বিচারের জন্য তাদের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়াও, ঘটনার শিকার নারীদের সহকর্মী ও বন্ধুদের সাক্ষাৎকারও রয়েছে, যারা অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
এই ঘটনার শিকার নারীদের মধ্যে ছিলেন মৌরিন ব্রেইনার্ড-বার্নেস, মেগান ওয়াটারম্যান, মেলিসা বার্তেলেমি, এবং অ্যাম্বার কস্টেলো। এদের ছাড়াও আরও কয়েকজন নারীর মৃত্যুর সাথে হিউয়ারম্যানের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, শানান গিলবার্ট নামে নিখোঁজ হওয়া এক নারীর মৃত্যুরহস্য এখনো উন্মোচন করা যায়নি।
ডকুসিরিজটি শুধু একটি সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনার বিবরণই নয়, বরং এটি আইনের দুর্বলতা, পুলিশের দুর্নীতি এবং সমাজের কিছু মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিচ্ছবি।
এটি দর্শকদের মনে অনেক প্রশ্ন জন্মায়, যা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান