মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বিদ্যমান কাঠ ব্যবসা নিয়ে চলমান বিরোধ আরও একধাপ বেড়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কানাডা থেকে আসা কাঠের ওপর বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যদিও এখনো নতুন কোনো শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসেনি, তার আগেই পুরনো শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ এক পর্যালোচনা শেষে জানিয়েছে, কানাডা থেকে আমদানি করা কাঠের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ও কাউন্টারভেইলিং শুল্ক ১৪.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৪.৪৫ শতাংশ করা হবে। ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত নথিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বাণিজ্য বিরোধের মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে কানাডার কাঠ শিল্প সরকারি ভর্তুকি পায়, যা তাদের বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা দেয়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের প্রিমিয়ার ডেভিড ইবি এই পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য বাড়ির নির্মাণ খরচ বাড়বে, অথচ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণ শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, কানাডা থেকে কাঠ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি আরও কঠিন করে তুলবে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হোম বিল্ডার্স/ওয়েলস ফার্গো হাউজিং মার্কেট ইনডেক্স এর হিসাব অনুযায়ী, শুল্কের কারণে একটি বাড়ির গড় নির্মাণ খরচ প্রায় ৯,২০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এই শুল্ক বৃদ্ধিকে সমর্থন করছেন। তাদের মতে, এর ফলে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে এবং তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে পারবে।
ইউএস লুম্বার কোয়ালিশনের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কানাডার এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয় এবং এর ফলে কর্মসংস্থান কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের প্লেজেন্ট রিভার লুম্বারের কো-প্রেসিডেন্ট জেসন ব্রোচু জানান, বর্তমানে তাদের দুটি মিলে উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ শতাংশে রয়েছে। তবে, চাহিদা বাড়লে তারা কয়েক মাসের মধ্যেই কর্মী নিয়োগ করে উৎপাদন আরও বাড়াতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, কাঠ শিল্প আধুনিক হয়েছে এবং তাদের অঞ্চলে কর্মী নিয়োগে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিরোধগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপরও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম এবং বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন