শেয়ারবাজারে অস্থিরতা: কিভাবে সামাল দেবেন আপনার বিনিয়োগ?
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্কের ঘোষণার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, আপনার কষ্টার্জিত অর্থ সুরক্ষিত রাখতে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি।
আজকের লেখায় আমরা জানবো, শেয়ার বাজারের এই উত্থান-পতনকালে কিভাবে আপনার বিনিয়োগকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।
শেয়ারবাজারের এই ধরনের পতন নতুন নয়। অতীতেও এমনটা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। বাজারের এই আচরণকে মাথায় রেখে, একজন সচেতন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সবার আগে মনে রাখতে হবে, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অস্থির বাজারে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নাও হতে পারে।
- বৈচিত্র্য আনুন আপনার বিনিয়োগে: একটি স্থিতিশীল পোর্টফোলিও তৈরি করতে, আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন খাতে বিভক্ত করুন। শুধু শেয়ারের উপর নির্ভর না করে, বন্ড, সরকারি সঞ্চয়পত্র এবং ফিক্সড ডিপোজিটের মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতেও কিছু অর্থ রাখতে পারেন। এতে বাজারের অস্থিরতা আপনার বিনিয়োগের উপর কম প্রভাব ফেলবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আপনার পোর্টফোলিওকে ৬০:৪০ অনুপাতে ভাগ করেন – ৬০ শতাংশ শেয়ারে এবং ৪০ শতাংশ বন্ড বা অন্যান্য স্থিতিশীল খাতে, তবে বাজারের খারাপ পরিস্থিতিতেও আপনার ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হবে।
- দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে নজর দিন: শেয়ারবাজারে স্বল্পমেয়াদী লাভ বা ক্ষতির হিসাব না করে, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের কথা ভাবুন। বাজারের উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পেতে হলে, ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে।
অল্প সময়ের জন্য বাজার নিচে নামলে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে, বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
- বাজারের পতনকে সুযোগ হিসেবে দেখুন: শেয়ারের দাম কমে গেলে, এটিকে ভালো শেয়ার কেনার একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। তবে তাড়াহুড়ো করে সব শেয়ার কিনে ফেলা ঠিক নয়। ধীরে ধীরে, বুঝে শুনে বিনিয়োগ করুন।
- অবসরের জন্য প্রস্তুতি: যারা এখনো চাকরি করছেন, তাদের জন্য নিয়মিত সঞ্চয় করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, যারা অবসর জীবনে প্রবেশ করেছেন, তাদের জন্য সঞ্চিত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। এই সময়ে নিয়মিত আয়ের জন্য সরকারি বন্ড অথবা ব্যাংক-এর ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারেন।
এছাড়া, আপনার জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য কিছু নগদ টাকা হাতে রাখা ভালো।
- খরচ কমানোর চেষ্টা করুন: বাজারের খারাপ পরিস্থিতিতে আপনার ব্যয়ের হিসাব রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো জরুরি। একটি বাজেট তৈরি করে, সেই অনুযায়ী খরচ করলে আপনার আর্থিক চাপ কমবে।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া ভালো। তারা আপনার আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
শেয়ার বাজারের এই অস্থির সময়ে, আতঙ্কিত না হয়ে, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। মনে রাখবেন, সচেতনতা এবং ধৈর্যই একজন সফল বিনিয়োগকারীর মূল মন্ত্র।
তথ্য সূত্র: সিএনএন