হলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান এবং তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুরহস্যের তদন্তের ছবি ও নথি প্রকাশে বাধা দিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে হ্যাকম্যান পরিবারের উত্তরাধিকারীরা। তাঁদের আশঙ্কা, ময়নাতদন্তের ছবি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জনসমক্ষে এলে তা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন এবং শোকের প্রতি আঘাত হানতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিউ মেক্সিকোর একটি বাড়িতে হ্যাকম্যান এবং তাঁর স্ত্রীর অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, ৯৫ বছর বয়সী হ্যাকম্যান হৃদরোগ ও আলঝেইমার্স-এর জটিলতায় মারা যান। অন্যদিকে, ৬৫ বছর বয়সী বেটসি আরাকাওয়া ‘হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যা একটি বিরল রোগ এবং ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ায়।
হ্যাকম্যানের পরিবারের পক্ষ থেকে জুলিয়া পিটার্স, যিনি অভিনেতার সম্পত্তির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, সান্টা ফে-র একটি জেলা আদালতে আবেদন করেছেন। আবেদনে মৃতদের ছবি ও ভিডিওসহ মামলার নথিগুলো সিল করার জন্য আদালতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, এই ছবিগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল হতে পারে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা পরিবারের সদস্যদের মানসিক শান্তির ব্যাঘাত ঘটাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, শোকের সময়ে গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার বিষয়টিও তাঁরা তুলে ধরেছেন।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, হ্যাকম্যান এবং আরাকাওয়া সান্টা ফে-তে অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। খ্যাতি ও জৌলুস থেকে দূরে, তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনকে সবসময় আড়ালে রাখতে পছন্দ করতেন। সান্টা ফে শহরটি তার শিল্পী এবং লেখক-অনুরাগীদের জন্য পরিচিত।
তবে, নিউ মেক্সিকোর ‘সরকারি নথিপত্র পরিদর্শন আইন’-এর অধীনে, জনসাধারণের তথ্য জানার অধিকারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের আইন অনুযায়ী, সাধারণত মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পরিচালিত তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনগুলো জনসমক্ষে উন্মুক্ত থাকে। এর কারণ, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
নিউ মেক্সিকো ফাউন্ডেশন ফর ওপেন গভর্নমেন্ট-এর আইনি পরিচালক আমান্ডা লেভিন জানিয়েছেন, আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা তদন্তের স্বচ্ছতাকে ব্যাহত করতে পারে। কারণ, এই ধরনের নথিপত্র প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হলো তদন্তের সঠিকতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এছাড়াও, হান্টাভাইরাসের বিষয়টি জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এই বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা জরুরি।
জিন হ্যাকম্যান ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে ‘দ্য ফ্রেন্স কানেকশন’, ‘হুসিয়ার্স’ এবং ‘সুপারম্যান’-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর অসাধারণ অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দুটি অস্কার জয় করেন। বেটসি আরাকাওয়া, যিনি হাওয়াই দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন, পেশায় ছিলেন একজন পিয়ানোবাদক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান