কানাডার একজন ডাক্তারের অভিজ্ঞতা: ইচ্ছামৃত্যু এবং নৈতিক দ্বিধা
মৃত্যু একটি চিরন্তন সত্য, যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু কিভাবে একজন মানুষ এই যাত্রার শেষ প্রান্তে পৌঁছাবেন, সেই বিষয়ে মানুষের নিজস্ব কিছু ভাবনা থাকে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে কানাডার মতো দেশে, চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ইচ্ছামৃত্যুর ধারণাটি ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পাচ্ছে। সম্প্রতি, “দ্য গার্ডিয়ান”-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, ড. স্টেফানি গ্রিন নামের একজন কানাডিয়ান চিকিৎসক তাঁর রোগীদের ইচ্ছামৃত্যু বিষয়ক কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা ইচ্ছামৃত্যু সংক্রান্ত নৈতিক এবং মানবিক দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।
কানাডায়, ২০১৬ সাল থেকে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুবরণ করার (Medically Assisted Death – MAiD) সুযোগ রয়েছে। ড. গ্রিন এই সংক্রান্ত একটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি ৭৪ বছর বয়সী হার্ভে নামের একজন রোগীর ইচ্ছামৃত্যু প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন। লিভারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া হার্ভে, জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিজের ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেন। ড. গ্রিন তাঁর এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর আগে রোগীর শারীরিক অবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাঁর চূড়ান্ত ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেন।
ড. গ্রিনের বর্ণনায়, হার্ভের পরিবারের সদস্যরা তাঁর এই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। হার্ভে চেয়েছিলেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরা যেন তাঁর এই যাত্রার সাক্ষী থাকে। তিনি তাঁর বন্ধুদের সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে এবং নিজের বাড়িতেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে ড. গ্রিন, হার্ভের এই ইচ্ছাকে সম্মান জানান এবং মৃত্যুর প্রক্রিয়াটি সহজ করতে সাহায্য করেন।
আরেকটি ঘটনায়, মাল্টিপল সিস্টেম অ্যাট্রোফি নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া ৭৭ বছর বয়সী এডনার ইচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এডনা হুইলচেয়ারে বসেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তাঁর পরিবারের কিছু সদস্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, কিন্তু ড. গ্রিন, রোগীর স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে এডনার নিজের। শেষ পর্যন্ত, এডনা তাঁর বোনের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
ইচ্ছামৃত্যুর এই দুটি ঘটনা, রোগীদের স্বাধীনতা এবং চিকিৎসকদের নৈতিক দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। একজন চিকিৎসক হিসেবে ড. গ্রিন, রোগীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁদের চূড়ান্ত ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, রোগীর পরিবারের সদস্যদের অনুভূতি এবং তাঁদের মানসিক সমর্থনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, ইচ্ছামৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশে এখনো কোনো আইন তৈরি হয়নি। এটি একটি বিতর্কিত বিষয় এবং এর নৈতিক দিকগুলো নিয়ে সমাজে বিভিন্ন মত রয়েছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো, আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান