1. [email protected] : adminb :
  2. [email protected] : Babu : Nurul Huda Babu
March 15, 2025 10:31 PM
সর্বশেষ সংবাদ:
বিদ্যুৎ বিপর্যয়: কিউবায় নেমে এলো ঘোর অন্ধকার! মানার জাদু: ৪০ বছর পর, স্প্যানিশ গানে আজও মুগ্ধ শ্রোতা! রমজানে সিরিয়ার হৃদয়বিদারক দৃশ্য: ছবিগুলো কাঁদাবে! পোপের সাথে সরাসরি কথা বলতে চান? ভ্যাটিকানের সিস্টারদের অভিজ্ঞতা! যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে বাঁচাতে স্টারমারের বড় ঘোষণা! চেলটেনহ্যাম উৎসবে বাজির লড়াই: জয় কার, পরাজয় কাদের? বোগলের ঝলক: ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও কুইন্স পার্কের বিপক্ষে পয়েন্ট অর্জন, স্তম্ভিত ফুটবল জগৎ! আতঙ্কে বিশ্ব! ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কাঁপছে দেশ? ডিইআই ইস্যুতে ট্রাম্পের বড় জয়, আদালত কি রায় দিল? পোল্যান্ডের প্রস্তাব: জেমস বন্ড হতে আইজেনবার্গকে সামরিক প্রশিক্ষণ!

প্রথমবারেই বাজিমাত! কীভাবে বিটলস জেমসের কণ্ঠ খুঁজে দিল?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Saturday, March 15, 2025,

শিরোনাম: সঙ্গীতের সুরে সন্তানের মুক্তি: অটিজম জয় করে এক পিতার সংগ্রাম

ছোট্ট জেমসের জন্মের পর থেকেই বাবা জন হ্যারিস গান শোনানো শুরু করেন। জেমসের কান্নার সুরে প্রশান্তি এনে দিতে কখনো বাজায়েছেন বব মার্লের গান, আবার কখনোবা পছন্দের তালিকায় ছিল অন্যান্য সুর। আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই, গানের তালে সেও যেন হেসে উঠত, ভালোবাসত বাবার কণ্ঠে গান শুনতে। কিন্তু এক বছর পেরোনোর পরেই জন টের পান, সঙ্গীত তার সন্তানের জীবনে অন্যরকম প্রভাব ফেলে।

ক্যাপ্টেন বিফহার্টের ‘ক্লিয়ার স্পট’ অ্যালবামটি একবার বাজিয়েই বন্ধ করে দিতে হয়। গানের ভিন্নধর্মী সুর, কর্কশ কণ্ঠ এবং বাদ্যযন্ত্রের মিশ্রণ জেমসের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর জন বুঝতে পারেন, সঙ্গীতের জগৎটা জেমসের জন্য বিশেষ কিছু।

দেড় বছর বয়সে জেমস হাঁটতে শুরু করে, এরপর ধীরে ধীরে কথা বলতে শেখে। অন্যান্য শিশুদের থেকে তার জগৎটা ছিল একটু আলাদা। খুশি হলে সে দু’হাত নেড়ে উড়তে চাইত, যা অন্যদের কাছে বেশ মজাদার মনে হতো।

প্রতি রবিবার বাবা জেমসকে নিয়ে যেতেন নদীর ধারে, যেখানে পাথর আর নুড়ি দিয়ে খেলা করত সে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও তার যেন ক্লান্তি আসত না। বাড়ি ফেরার কথা বললেই তার মন খারাপ হয়ে যেত।

জেমসের আরেকটি পছন্দের জিনিস ছিল গান আর বই। প্রতিদিন সকালে সে ‘ফি পি বাস’ বলে বইয়ের তাকের দিকে ছুটে যেত, যেখানে ছিল বিটলস-এর (The Beatles) প্রায় ৭০টি বই। বাবা ছিলেন এই ব্যান্ডের একনিষ্ঠ ভক্ত, মা একসময় তাদের রেকর্ড লেবেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একদিন জেমস একটি বইয়ের পাতা উল্টে ‘ম্যাজিক্যাল মিস্ট্রি ট্যুর’-এর বাসের ছবি খুঁজে বের করে।

যখন জেমসের বয়স দু’বছর, তখন তাকে একটি খেলনা পিয়ানো কিনে দেওয়া হয়। সাদা কীগুলো বাজালে সুরের কোনও হেরফের হবে না, তাই বাবাই তাকে সুর তোলার কায়দা শিখিয়েছিলেন। বাবা যখন গিটার বাজাতেন, তখন জেমস ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিয়ানোর সাদা কীগুলো চেপে যেত, আর মাঝে মাঝে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসত।

একদিন, বিটলসের ‘পেপারব্যাক রাইটার’ গানটি শুনে জেমস যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়। গানের প্রতিটি শব্দ সে মুখস্থ করে ফেলেছিল। তার এই ক্ষমতা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনের মনে তখন উদ্বেগের ছায়া। জেমস অন্যান্য শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারত না।

তখনো পর্যন্ত, বাবা-মা হিসেবে জনেরা জেমসের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা বুঝতে পারছিলেন, তাদের সন্তানের জগৎটা অন্যদের থেকে আলাদা।

জেমসের যখন তিন বছর বয়স, তখন তার জীবনে আসে বোন রোজা। বোনকে প্রথমবার দেখে জেমস কিছুটা থমকে গিয়েছিল, যেন সে বুঝতে পারছিল না কী হচ্ছে! কয়েক সপ্তাহ পরে, সে হঠাৎ করেই কান্না জুড়ে দেয়। তার একটাই প্রশ্ন ছিল, “কেন রোজা?”

এরপর তারা ওয়েলস থেকে সোমারসেট-এ (Somerset) তাদের বাড়ি পরিবর্তন করে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে জেমসের বেশ অসুবিধা হতে শুরু করে। সে চুপ হয়ে যায়, আগের মতো হাসিখুশিও থাকে না।

একদিন, টেনবি-র সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে জেমস যখন টেলিভিশনের একটি পরিচিত লাইন বলতে শুরু করে, “যখন রাত কালো হয়, তারাগুলো উজ্জ্বল থাকে…” তখন জনের মনে আতঙ্ক জাগে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পরেও সে একই কথা বলতে থাকে, যেন সে সম্মোহিত হয়ে আছে।

এরপর একদিন, জেমসের নার্সারি থেকে খবর আসে। শিক্ষকরা জানান, জেমসের আচরণে কিছু সমস্যা রয়েছে। অন্যদের সঙ্গে সে স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারে না। তাদের সন্দেহ হয়, জেমস হয়তো অটিজমের শিকার।

এরপর শুরু হয় কঠিন এক লড়াই। জনের চোখে জেমস তখন এক অসহায় শিশু। বিশেষজ্ঞরা তাদের জানান, অটিস্টিক শিশুরা কীভাবে অন্যদের থেকে আলাদা। তারা ভালোভাবে কথা বলতে পারে না, অন্যের কথা বুঝতে তাদের অসুবিধা হয়। তাদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশার অভাব থাকে।

বাবা-মা হিসেবে তারা বুঝতে পারেন, জেমস অন্যদের মতো স্বাভাবিক নয়। সে কারও দিকে তাকিয়ে হাসে না, কারও প্রশ্নের উত্তর দেয় না, এমনকি কাউকে অনুসরণও করে না।

চিকিৎসকেরা জানান, অটিস্টিক শিশুরা একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে। জেমস যখন খুশি হতো, তখন হাত নাড়াতো, যা আসলে এক ধরণের ‘সেলফ-স্টিমুলেশন’।

বিভিন্ন পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, জেমস অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (Autism Spectrum Disorder) আক্রান্ত।

এরপর জেমসের বাবা-মা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে থাকেন। জেমসকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সঙ্গীতের সাহায্য নেন। বিটলসের গানগুলো তাকে আনন্দ দিত। সে নির্ভুলভাবে ‘আই অ্যাম দ্য ওয়ালরাস’ গানটি গাইত। ‘প্যাপারব্যাক রাইটার’ অথবা ‘ক্যান্ট বাই মি লাভ’ শুনলে সে ঘর জুড়ে ছুটোছুটি করত।

একদিন, তারা জেমসকে ‘ইয়েলো সাবমেরিন’ সিনেমাটি দেখান। জেমস এতটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল যে, তার কাছ থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না।

জেমসের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন তারা তাকে একটি সাধারণ স্কুলে ভর্তি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ তার জন্য সহজ ছিল না। তার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন ছিল।

এরপর শুরু হয় কাউন্সিলের সঙ্গে তাদের আইনি লড়াই। অবশেষে, কাউন্সিল জেমসের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়। স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনগুলোতে জেমসকে খুব অস্থির লাগছিল। ক্লাসে সে চুপচাপ বসে থাকত, মাঝে মাঝে হাত নাড়াতো।

কিন্তু ধীরে ধীরে, জেমস স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। সঙ্গীতের শিক্ষক মিস পার্সন তাকে গান শেখাতেন। জেমসকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো।

একদিন, মিস পার্সন তাদের স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে জেমসকে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন। জেমস রাজি হয়। অনুষ্ঠানে জেমসের বাবাও তার সঙ্গে গিটার বাজানোর সিদ্ধান্ত নেন।

অনুষ্ঠানের দিন, জেমস মঞ্চে ওঠে। সে ‘হোন দ্য সেইন্টস গো মার্চিং ইন’ এবং ‘আই’ম ওয়েটিং ফর দ্য ম্যান’ গান দুটি পরিবেশন করে। গানগুলো শুনে দর্শক করতালি দেয়। জেমসের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

জেমসের বাবা-মা তাদের সন্তানের এই সাফল্যে আনন্দিত হন। তারা বুঝতে পারেন, সঙ্গীত জেমসের জীবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

এই গল্পটি অটিজম জয় করে এক শিশুর বেড়ে ওঠার গল্প। এই গল্পে আছে এক পিতার সংগ্রাম, যা সন্তানের প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT